স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ : রপ্তানি কমতে পারে ২১ হাজার কোটি টাকা

এম শারফুল আলম, ঢাকা অফিস প্রধান >>>
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা প্রত্যাহার করা হলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমতে পারে।  এতে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি আয় কমবে।  বর্তমান বাজার দরে টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভার্চ্যুয়াল সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব তথ্য দেন তিনি।  উত্তরণের পর প্রস্তুতি পর্বে বাংলাদেশের করণীয় কী, তা জানাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন ড. দেবপ্রিয়।
এ সময় এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর আগামিতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি।  ড. দেবপ্রিয় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর প্রস্তুতি পর্বে একটি ‘উত্তরণকালীন কৌশলপত্র’ প্রণয়নের তাগিদ দেন।  একই সঙ্গে তিনি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে বেশি গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরপর ক্রমান্বয়ে বাণিজ্য সুবিধাগুলো হারাবে বাংলাদেশ।  যেমন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে উত্তরণের পরও বাড়তি তিন বছর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা থাকবে।
গত শুক্রবার রাতে জাতিসংঘের কমিটি ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছে।  সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে।  এর আগে গত শনিবার এই খুশির খবর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এ স্বীকৃতি পেলেও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে বাংলাদেশকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে।  আলাপচারিতায় দেবপ্রিয় বলেন, এ দেশে আলোচনাগুলো বেখাপ্পা মনে হয়।  বিদেশ থেকে কীভাবে বেশি সাহায্য-সহায়তা পাব, এ নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।  কিন্তু কোন কোন সমস্যার কারণে এই সাহায্য নিতে হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা বেশি হয় না।  সমস্যাগুলোর সমাধানে বেশি মনোযোগী হই না।
তিনি আরো বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও যদি বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই, তাহলে ভুল হবে।  বিশেষ সুবিধাকে বাড়তি পাওনা হিসেবে দেখতে হবে।  তবে দেশের অভ্যন্তরে সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে।  এ জন্য দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ৩টি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।  এগুলো হলো- ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে পরিবেশ সৃষ্টি করা, কর আহরণ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি।  এ ছাড়া এলডিসি থেকে মসৃণ উত্তরণের জন্য একটি উত্তরণকালীন কৌশলপত্র তৈরির সুপারিশও করেন দেবপ্রিয়।  দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, এলডিসি থেকে বের হলে রপ্তানি খাতের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিই বেশি আলোচনায় আসে।  অন্য প্রভাবের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় একধরনের অনীহা আছে।  তার মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর মেধাসত্ত্বসংক্রান্ত শর্ত আরো কড়াকড়ি হবে।  কৃষি খাতে ভর্তুকি আরো স্বচ্ছ ও সীমিত হতে হবে।  নতুন শিল্পকে প্রণোদনা দেয়ার শর্ত কঠিন হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ