সারাদেশে মডেল মসজিদ : হাত দিলেই উঠে আসছে পলেস্তারা, ফেটে যাচ্ছে টাইলস

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদের মধ্যে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা সদরে একটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বেলা ১১ টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে উদ্বোধনের আগ থেকেই মসজিদের ফ্লোরে থাকা টাইলস ফেটে ও উঠে যাচ্ছে।  পিলার ও দেয়াল বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে।  এতে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অতিথিরা।  মসজিদ নির্মাণ অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে একই ডিজাইনের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এটি।  সারাদেশের মতো সালথা উপজেলা পরিষদের পাশে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদের তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।  এস রহমান অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই মডেল মসজিদের নির্মাণকাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম দেখা যায়।  নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।  ঢালাই কাজে মোটা দানার বালু ব্যবহারের পরিবর্তে স্থানীয় বালু, নিম্নমানের পাথর ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে।  মার্বেল পাথরের টাইলস লাগানোর কথা থাকলেও নিম্নমানের চায়না টাইলস লাগানো হয়েছে।
দক্ষ মিস্ত্রি দিয়ে নির্মাণকাজ করা হয়নি বলেও অভিযোগ।  তাই উদ্বোধনের আগেই ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে টাইলসগুলো উঠে যাচ্ছে ও ফেটে গেছে।  ভবনের কয়েকটি পিলার ও দেয়াল বাঁকা হয়ে আছে।  এটি দেখে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা সরেজমিনে দেখে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।  সেই প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না।  প্রধানমন্ত্রীও মেনে নেবেন না।  আমরা নির্মাণকাজটি ঘুরে দেখে লক্ষ্য করেছি, নিয়মমাফিক কাজটি করা হয়নি।  কাজে ব্যাপক অনিয়ম চােখে পড়েছে।  যে কারণে উদ্বোধনের আগেই নিম্নমানের টাইলসগুলো ফেটে গেছে।  ফ্লোর ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে লাগানাে টাইলস ধরলেই হাতের সঙ্গে উঠে আসছে।  পিলার ও দেয়াল বাঁকা হয়ে আছে’।
তিনি বলেন, সাড়ে ১২ কোটি টাকার কাজে এতো অনিয়ম আসলেই মেনে নেয়া যায় না।  বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। 
এ বিষয়ে উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী মামুদুল হাসান বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।  ধর্মীয় কাজ হওয়া সত্ত্বেও মসজিদের কাজে ব্যবহার করা সব মালামালই নিম্নমানের।  যে কারণে দেয়ালে হাত রাখলেও পলেস্তারা ও চুন হাতের সঙ্গে উঠে আসে।  উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসা সবাই মসজিদ নির্মাণকাজের খারাপ দৃশ্য নিজ চোখে দেখে গেছেন’।
ফরিদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, মসজিদ নির্মাণকাজে কিছু অনিয়ম আমরা দেখেছি।  তবে ঠিকাদার এসব ঠিক করে দিতে চেয়েছেন।
কাজে অনিয়মের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, উদ্বোধন করা হবে বলে তাড়াহুড়ো করে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করতে হয়েছে।  এজন্য অনেক কাজই সঠিক বা শিডিউল মতো করা সম্ভব হয়নি।  তিনি আরও বলেন, তবে এখনো সময় আছে।  আমি সব অসঙ্গতি, অনিয়ম ও যে সমস্যাগুলো আছে সব ঠিক করে দেব।
এ প্রসঙ্গে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাসিব সরকারের বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ