যেভাবে আটক অসংখ্য ধর্ষণের নায়ক মজনু

ভবঘুরে মাদকাসক্ত ধর্ষক মজনুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার প্রাক্কালে।

ঢাকা ব্যুরো
মজনু, ভবঘুরে মাদকাসক্ত। দিন মজুর, ছিনতাই, ধর্ষণসহ যখন যে কাজের সুযোগ পেতো তাই করতো। নিজেও হিসেব করে বলতে পারেনি ঠিক কতগুলো ধর্ষণ সে করেছে। এই হিসেবে না রাখলেও এবার এই সিরিয়াল রেপিস্টের আর রক্ষা হলো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত এই সিরিয়াল রেপিস্ট মজনুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার (৮ জানুয়ারি) ভোরে গাজিপুরের শেওড়া রেল ক্রসিং এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পেশায় ছিনতাইকারী মজনুর (৩০) বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। র‌্যাব জানিয়েছে, মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। এর আগেও সে একাধিক নারীকে ধর্ষণ করেছে। এছাড়া মাদক সেবন, ছিনতাই ও চুরি তার নিত্যদিনের কাজ। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে কাওরান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, স্পর্শকাতর এই ঘটনাটি জানার পর থেকে র্যাবের একাধিক টিম মাঠে নামে। ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি খায়রুল নামের এক রিকশা চালকের কাছে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে মোবাইলটি অরুনা নামের এক নারীর কাছ থেকে কিনেছে। এরপর র্যাব অরুনাকে খোঁজে বের করে। অরুণা র্যাবকে জানায় মোবাইলের ডিসপ্লে ভাঙা অবস্থায় সে মোবাইলটি মজনু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছে। র্যাব তখন অরুণার কাছ থেকে মজনুর চেহারার বর্ণনা নিয়ে ভুক্তভোগীর দেয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হয় মজনু এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পরে অভিযান চালিয়েছে মজুনকে গ্রেফতার করা হয়।

সারোয়ার বলেন, প্রাথমিকভাবে মজনু স্বীকার করেছে সে ওই শিক্ষার্থীকে একাই ধর্ষণ করেছে। কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পর থেকে সে তাকে অনুসরণ করেছিল সে। তখন মাদকাসক্ত ছিল মজনু। একপর্যায়ে সে ভুক্তভোগীর গলায় টিপ দিয়ে তুলে নিয়ে যায় পাশের নির্জন স্থানে। সেখানে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। ভুক্তভোগীকে সে একাধিকবার কিল, ঘুষি ও লাথি দেয়। এমনকি তাকে হত্যার জন্য একাধিকবার স্টেপ নেয়। তবে অজ্ঞান করার জন্য কোনো ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করে নি। তিনি বলেন, মজুন আমাদের কাছে স্বীকার করেছে ১০ বছর আগে ঢাকায় আসার পর তার স্ত্রী মারা যায়। তার দুই বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে তার দুটি দাত ভেঙে যায়। এরপর সে আর কোনো বিয়ে না করে চুরি, ছিনতাই, রাজাহানিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ছিনতাই করতে গিয়ে মানুষের ব্যাগ মোবাইল ফোন কেড়ে নিত। আর সুযোগ পেলেই সে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। ইতিমধ্যে সে একাধিক ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধি নারীকে ধর্ষণ করেছে। সে একজন সিরিয়াল রেপিস্ট বলে জানিয়েছে।
এর আগে, গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে রওয়ানা দেন ওই শিক্ষার্থী। রাস্তা ভুল করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন। এরপর ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় অজ্ঞাত কেউ তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন ঝোপে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণের পাশপাশি শারীরিক নির্যাতন করে ধর্ষক। রাত ১০টার দিকে যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে তখন একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বন্ধুর বাসায় গিয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলেন। রাত ১২টার দিকে তাকে এনে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরের দিন ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর তার শরীরে ধর্ষণের আলামত রয়েছে বলে জানান, ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।

ডিসি/এসআইকে/সাআ