আজ শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।- ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আজ ১৭ মে রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।  পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনায় দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের এই দিনে স্বদেশে ফেরেন তিনি।
দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৩৯ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে।  সেই সঙ্গে তার যোগ্য নেতৃত্বে চার চার বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে দলটি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।  কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন।  তার সফল নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ চার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে এবং বর্তমানেও ক্ষমতাসীন।  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই সময়ের শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে।  আগামী বছর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।  ইতোমধ্যেই দেশ নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার হাত দিয়েই দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে এবং উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও দেশি-বিদেশি ঘাতকচক্র স্বপরিবারে হত্যা করে।  বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু ওই হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তখন দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি।  দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের এই দিনে ভারত থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার দল আওয়ামী লীগ।  জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা।  আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধাবিভক্ত ও ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে পড়ে দল।  এই প্রেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান।  ওই বছরের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় আরেক সংগ্রামী জীবন।  দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানামুখি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে আজকের অব্স্থানে দাঁড় করিয়েছেন তিনি।  বহুবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।  এই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন।
এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জনও বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা।  আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে।  এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তিনিই দিয়েছেন।  মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার কর্মসূচিগুলো জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনার পরিচিত বাড়ছে।
দেশের মাটিতে ফিরে এলে ঢাকায় লাখ লাখ জনতা তাকে স্বাগত জানায়। এ সময় শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।  পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।  আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই’।
এর পর থেকেই শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন করে আরেক সংগ্রামের পথ চলা।  তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।  তার নেতৃত্বে চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে বর্তমানে টানা তৃতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে।  আর চার চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।  তিনবার বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন তিনি।
নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী।  তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণির ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প ২০২১’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রতি বছর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু এ বছর দেশ করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত।  সারা দেশের মানুষ করোনার সঙ্গে যুদ্ধে রয়েছেন।  এই পরিস্থিতির কারণে দিবসটিতে কোনো কর্মসূচি থাকছে না।