সংসদের সামনে বাজেটের কপি ছেঁড়া বিএনপি’র ঔদ্ধত্যের নতুন বহি:প্রকাশ: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছার মাহমুদ।

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সংসদের সামনে বাজেটের কপি ছেঁড়া বিএনপি’র ঔদ্ধত্যের নতুন বহি:প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।  আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করেছিল।  পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের কর্মসূচি যে রাজনৈতিক দল দেয়, সংসদের সামনে গিয়ে তাদের বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলা খুব স্বাভাবিক।  যে উদ্ধত আচরণ তারা সবসময় করে আসছে, সেটিরই নতুন বহি:প্রকাশ হচ্ছে সংসদের সামনে গিয়ে বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলা’।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যে এবারই বাজেট প্রত্যাখ্যান করছে তা তো নয়, গত ১১ বছর ধরে প্রতিবারই তারা বাজেট প্রত্যাখ্যান করছে এবং প্রতিবারেই বলেছে বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য না, জনগণের কল্যাণে আসবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।  কিন্তু গত ১১ বছর ধরে সমস্ত বাজেটই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বাস্তবায়নের হার ৯৭-৯৮ শতাংশ। সেই বাজেটগুলো বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে দেশের দারিদ্র্য কমে অর্ধেকে নেমেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, জিডিপি প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের পথে উন্নীত হয়েছে।  এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।  কিন্তু তারা কোনোবারেই বাজেট গ্রহণ করতে পারেনি’।
ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি সেখানে বলেছে, মাত্র একদিন বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।  কিন্তু আসলে তা নয়, পুরো বাজেট সেশনেই কিন্তু বাজেটের ওপর বক্তৃতা হয়েছে।  তারা নিজেরা বাজেট অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেনি, বাজেট অধিবেশনে যে আলোচনা হয়েছে সেটিও ঠিকমত খেয়াল রাখেনি, সে কারণেই তারা এ ধরনের ভুল বক্তব্য দিয়েছে।  এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিন সংসদ চালানো সম্ভবপর নয়।  পৃথিবীর কোনো দেশে সেটি হচ্ছে না।  আমাদের দেশে এখন করোনা ভাইরাস প্রায় তুঙ্গে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, গড়ে প্রায় ৪০ জন বা তার বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।  এই সময় তো সংসদ প্রতিদিন চালানো সম্ভবপর নয়, এই বাস্তবতা তারা বুঝেও এ ধরনের অসত্য, অপ্রাসঙ্গিক কথাগুলো বলে।
এসময় কুয়েতে মানবপাচারের দায়ে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপলু গ্রেফতারের ফলে সেখানে কর্মী রপ্তানি ব্যাহত হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. হাছান বলেন, ‘কুয়েতের তদন্তে সেখানকার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে এসেছে।  তাদের সম্পৃক্ততা, সহযোগিতা ছাড়া এই কাজগুলো হতো না, সুতরাং তারাও সমভাবে দায়ী।  সুতরাং এ ঘটনায় আমাদের শ্রমবাজারে অর্থাৎ কুয়েতে কর্মী রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না’।
করোনা পরীক্ষার ফি নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।  আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি এটি পুণর্বিবেচনা করার জন্য।  তবে একেবারেই বিনামূল্যের কারণে অনেক সময় যাদের প্রয়োজন নেই তারাও পরীক্ষা করে।  কিন্তু গরীব মানুষ যাতে প্রয়োজনে বিনামূল্যে পরীক্ষা করাতে পারে, সেটি নিয়ে তার সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি’।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের সল্টগোলায় ৫০ শয্যার বিজিএমইএ কোভিড-১৯ ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন।  তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।  এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হবার জন্য তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’কে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।  তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘লাইফ-লাইন’ বলেন মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন।  বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক, প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও বোর্ড সদস্যবৃন্দ উদ্বোধনী সভায় অংশ নেন।
চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ জানান, করোনার শুরুতে চট্টগ্রামে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূলতা, সীমাবদ্ধতা ছিল।  কিন্তু আমরা ক্রমাগতভাবে সমন্বয় সভা করে প্রশাসন, পুলিশ, ব্যবসায়ী-স্বেচ্ছাসেবী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছি, সে কারণে আগের পরিস্থিতি এখন নেই, অনেক উত্তরণ ঘটেছে।  আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ যে সুবিধাগুলোর অপ্রতুলতা ছিল, আমরা সেই সংকট সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি, জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ