অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অজান্তে ব্যালেন্স কেটে নেওয়ার অভিযোগে সত্যতা মিলেছে, তদন্ত শুরু

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অজান্তে মোবাইল ব্যালেন্স থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।  তারপরই এ কাজে জড়িত ৮টি টিভ্যাস (টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস) অপারেটরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে শুরু হয়েছে অধিকতর তদন্ত।  এরইমধ্যে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে ৪৫ দিনের মধ্যে।
বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে (২৪৮তম) এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  বৈঠকে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত সব মোবাইলফোন অপোরেটর এবং টিভ্যাস প্রোভাইডার- এসএসডি টেক, পার্পল ডিজিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, দ্য অভিকথাচিত্র লিমিটেড, জয়কলস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফোর-ডিএল বাংলাদেশ লিমিটেড, গ্যাক মিডিয়া লিমিটেড, আজরা টেকনোলজিস লিমিটেড ও বিটুএম টেকনোলজিস লিমিটেডের বিষয়ে তদন্ত করবে কমিটি।
ওয়েলকাম টিউন, রিং টোন, নিউজ অ্যালার্ট সার্ভিস, খেলার খবর, গান, ধর্মীয় তথ্য ইত্যাদির সেবা দিয়ে থাকে টিভ্যাস প্রতিষ্ঠানগুলো।
অভিযুক্ত ৮ কোম্পানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পায়- যেসব গ্রাহকের অজান্তে মোবাইল অপারেটরগুলো ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে তারা যথেষ্ট শিক্ষিত নন; এসএমএস এবং আইভিআরের মাধ্যমে টিভ্যাস সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণত ফিচার ফোন গ্রাহকদের টার্গেট করা হয়; উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহকের সেবা মধ্যরাতের পর চালু হয়; যেসব গ্রাহককে টার্গেট করা হয়, তাদের তথ্য মোবাইলফোন অপারেটরের মাধ্যমে কনটেন্ট প্রোভাইডার বা ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানিকে সরবরাহ করা হয়।
তদন্তে আরও দেখা গেছে, অভিযোগের বিষয়ে কনটেন্ট প্রোভাইডার ও মোবাইল ফোন অপারেটররা একে অন্যের ওপর দায় চাপায়; টিভ্যাস অপারেটররা গ্রাহকের অজান্তে সার্ভিস ফোর্স অ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, যদিও মোবাইল অপারেটরগুলো চাইলে কোনওভাবেই টাকা কেটে নেওয়া যেত না- ফলে মোবাইল অপারেটরগুলোও দায় এড়াতে পারে না।  এ ছাড়াও অধিকাংশ টিভ্যাস প্রোভাইডারের ব্যবসায়িক পরিধি ছোট থাকায় তাদেরকে অপারেটরদের ইচ্ছানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় এবং সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরগুলোকে টিভ্যাস সেবা প্রদানে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) প্রদান বাধ্যতামূলক করার কথা বললেও তারা (মোবাইল অপারেটর) নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রতিটি কোম্পানির গ্রাহকের (সর্বনিম্ন ৪৯ এবং সর্বোচ্চ ১২০ জন) ওপর জরিপ চালিয়ে বেশিরভাগ অভিযোগের সত্যতা পায় বিটিআরসি। কমিশনের সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের ফোন করে তথ্য যাচাই করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
মোবাইল গ্রাহকের অজান্তে এটি চালু করে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ ছিল রবি ও বাংলালিংক অপারেটরের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের সূত্র ধরে গত বছরের ১২ নভেম্বর অপারেটর দুটির কাছে সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস পাঠায় বিটিআরসি। তখন থেকেই সেবা বন্ধ রাখার কথা বলেছিল বিটিআরসি।
অপারেটরগুলোর সূত্রে তখন জানা যায়, বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা করে তারা সমাধানে পৌঁছেছে।  গত ২০ নভেম্বর বিটিআরসি এই নির্দেশনা পাঠিয়ে কার্যকরের নির্দেশনা দিলে অপারেটর দুটি তাদের টিভ্যাস সেবাদাতাদেরকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছিল।  যদিও ২২ নভেম্বরের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত অস্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বিটিআরসি।
জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারির মধ্যে বাংলালিংকের টিভ্যাস সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আইভিআর সার্ভিসগুলোতে ওটিপি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও অপারেটরটি তা করেছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়, অপারেটরটি এরইমধ্যে বিটিআরসির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে।  রবিও এটি বাস্তবায়ন করেছে বলে জানা গেছে।  একই বিষয় গত ১৯ জানুয়ারির মধ্যে গ্রামীণফোনের বাস্তবায়ন করার কথা।  এ বিষয়ে জানার জন্য গ্রামীণফোনের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও অপারেটরটির কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যেসব টিভ্যাস প্রোভাইডার এবং মোবাইলফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অজান্তে ব্যালেন্স কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের স্থাপনা ও সার্ভিস ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম পরিদর্শন করবে কমিশন গঠিত কমিটি।  টিভ্যাস প্রোভাইডাররা বিদ্যমান টিভ্যাস গাইডলাইন ও ট্যারিফ অনুমোদনপত্র অনুযায়ী সেবা প্রদান করছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা হবে।
এ ছাড়া কী কী প্রক্রিয়ায় টিভ্যাস প্রোভাইডার ও মোবাইলফোন অপারেটর গ্রাহকের অজান্তে এই সেবা চালু করে ব্যালেন্স কেটে নেওয়া হচ্ছে, মোবাইলফোন অপারেটর বিদ্যমান গাইডলাইন অনুযায়ী ৬০:৪০ অনুপাতে টিভ্যাস প্রোভাইডারের সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি করছে কিনা এবং মোবাইল ফোন অপারেটরের বিলিং সিস্টেম টিভ্যাস প্রোভাইডারের কাছে স্পষ্ট কিনা সে বিষয়টিও তদন্ত করা হবে।
তাছাড়াও মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিভ্যাস সংক্রান্ত অভিযোগ কিভাবে নিষ্পত্তি করেন, অপারেটররা টিভ্যাস প্রোভাইডারদের কতদিন পর পর পেমেন্ট করেন, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগ প্রতি তিন মাস পর পর কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী টিভ্যাস সেবা দিচ্ছে কিনা- এসবও অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনে পেশ করবে কমিটি।

ডিসি/এসআইকেে/এমএস