রাজধানীর পাশাপাশি দেশের জেলায় জেলায় দেওয়া হচ্ছে করোনার টিকা, নিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানীর পাশাপাশি দেশের জেলা ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে একযোগে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদেরই প্রথমে ভ্যাকসিন নিতে দেখা গেছে।  আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে বিভিন্ন জেলার টিকাদান কর্মসূচির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
যশোর
মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোরেও এর উদ্বোধন হয়েছে।  যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ আজ রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) নিজে ভ্যাকসিন গ্রহণ করে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন।
রবিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তিনি এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।
এরপর একই স্থানে যশোরের জেলা প্রশাসক, ডাক্তার, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে প্রথম ভ্যাকসিন নিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।  নিজে ভ্যাকসিন নিয়ে চট্টগ্রামে করোনাভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি।  রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চারতলায় ভ্যাকসিন বুথে তিনি টিকা নেন।
এরপর একে একে ভ্যাকসিন নেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি, বিদ্যুৎ বড়ুয়া এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দৈনিক জনকণ্ঠ’র উপসম্পাদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মোয়াজ্জেমুল হক বলেন, ‘আমি ১১টা ২০ মিনিটে ভ্যাকসিন নিয়েছি।  কিন্তু এখন পর্যন্ত শরীরে কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। এর আগে আমি অনেক টিকা নিয়েছি। করোনা ভ্যাকসিন ওই সব টিকার মতোই মনে হচ্ছে। তাই এই ভ্যাকসিনকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’।
রংপুর
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮টি বুথে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।  রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রথমে টিকা নিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এরপর টিকা নেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু , অর্থপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক হামিদুর রহমান।  এর পরেই চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা টিকা নেবেন।
মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত গুজবে কান দিয়ে সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু টিকা গ্রহণ করে বলেন, ‘টিকা দেওয়ার সময় কোনও ব্যথা অনুভূত হয়নি এবং দেওয়ার পরও কোনও সমস্যা হয়নি।  আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক দেশের আগে টিকা এনে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, এ জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং সবাইকে করোনার টিকা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি’।
জেলায় রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সাড়ে ৫শ’ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।
নোয়াখালী
নোয়াখালীতে প্রথম ভ্যাকসিন নিয়েছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।  এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারাও ভ্যাকসিন নিন, কোনও গুজবে কান দেবেন না। যতদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকবে দেশ, নিরাপদে থাকবে বাংলাদেশ।’
এদিকে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রথম টিকা নিয়েছেন বসুরহাট পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে প্রথম করোনার টিকা নিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার।
মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  রবিবার (৭ ফেব্রয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার পর মানিকগঞ্জের ৯টি কেন্দ্রে এ কার্যক্রম শুরু হয়।  সকাল পৌনে ১১টার দিকে নার্সিং কলেজ কেন্দ্রে জেলা প্রশাসক এস. এম ফেরদৌস, পুলিশি সুপার রিফাত রহমান শামীম, সিভিল সার্জন আনোয়ারারুল আমিন আখন্দ একযোগে এই তিন জন টিকা গ্রহণ করেন।  পরে অন্যদের টিকা দেওয়া হয়।
করোনার টিকা নেওয়ার পর জেলা প্রশাসক এস. এম ফেরদৌস বলেন, যেসব বিজ্ঞানী এ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। করোনা প্রতিরোধে সকলকে এ ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, ভ্যাকসিন গ্রহণের পর আমার কোনও খারাপ লাগেনি।  সুস্থ থাকতে হলে সবার এ ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে ৮টি, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ৮টি, পুলিশ হাসপাতালে ১ এবং উপজেলাগুলোতে ৩ টি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।  এছাড়া ২টি টিম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রির্জাভ থাকবে।  প্রতিটি টিমে ২ জন করে টিকাদান কর্মী ও ৪ জন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, জেলায় ৪৮ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৮২৭ জন অ্যাপসের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
রাজশাহী
সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।  রাজশাহীতে প্রথম করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে তিনি করোনার টিকা নেন।  এ সময় তিনি বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন আমার কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে।  কোনও ধরনের ব্যথা অনুভব করিনি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোনোরকম অস্বাভাবিকও মনে হয়নি।  তাই ভয় না পেয়ে সবার প্রতি আমি আহ্বান জানাবো ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন। করোনাকে পরাজিত করে সুস্থ থাকুন’।
এমপি বাদশার টিকা নেওয়ার পর তার সহধর্মিনী অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস এবং সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার করোনার টিকা গ্রহণ করেন।  এরপর রামেক হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিতে শুরু করেন।
রাজশাহী শহরে মোট তিনটি কেন্দ্রে রবিবার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।  অন্য দুটি কেন্দ্র হলো—বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল।  দুপুর ১২টায় পুলিশ হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার জানান, রাজশাহীতে উপজেলা পর্যায়ে ১০টি কেন্দ্রে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।  এর মধ্যে ৯ উপজেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।  এর বাইরে গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা বিশেষায়িত হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএস