করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে নারীর উপস্থিতি কম কেন?

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম।  গতকাল বৃহস্পতিবার ( ২৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন।  তার মধ্যে পুরুষ ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৬৫ জন, নারী ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭৫ জন। অর্থাৎ মোট টিকা গ্রহণকারীর এক তৃতীয়াংশ নারী।
বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে, টিকাদান কর্মসূচিতে শুরু থেকেই নারীদের উপস্থিতি কম।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অজ্ঞতা ও প্রচারের অভাবই এর কারণ।  তবে নারীদের একটা বড় অংশ গর্ভবতী ও সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন বলেও তাদের উপস্থিতি কম।
সাধারণ ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামগুলোতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে টিকা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।  কিন্তু করোনা টিকাদান কর্মসূচিতে তা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না।  নির্বাচনের সময় ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের ভোট দিতে আসার জন্য জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ নেন, কিন্তু টিকার বেলায় তাদের দেখা নেই।
সিলেটের সালেহা বেগমের বয়স ৭০ বছর।  দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকেই টিকা নিতে আগ্রহী ছিলেন তিনি।  স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন না।  ছেলেমেয়েরাও থাকে দেশের বাইরে। তাকে নিবন্ধন করিয়ে টিকা নিতে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না।  সালেহা বেগম তার এক আত্মীয়কে বলার পর তিনি এসে নিবন্ধন করিয়ে দেন।  এরপর টিকা নিতে পেরেছেন তিনি।
টিকাদান কর্মসূচিতে নারীর উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে চিকিৎসক ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।  জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশই নারী।  নার্স, আয়াসহ মিলিয়ে সংখ্যাটা আরও বেশি। সেখানে টিকাকেন্দ্রে নারীর কম উপস্থিতি উদ্বেগজনক ও হতাশার।
তিনি আরো বলেন, বয়স্ক নারীদের পক্ষে ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিবন্ধন করে টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়া অনেক কঠিন।  মায়েদের না নিয়ে এলে তাদের পক্ষে সম্ভব নয় টিকা নেওয়া।  তারা যে নিজেরা নিবন্ধন করবেন, সে অবস্থাও তৈরি হয়নি। কারণ আমাদের মায়েরা কম্পিউটার বা মোবাইলে অভ্যস্ত নন।  যারা পারছেন না, তাদের সাহায্য করতে হবে।  এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিত’।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ডা. তানজিনা বলেন, ‘ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা ঘরে এসে আমার শয্যাশায়ী শ্বাশুড়ির খোঁজ নিয়ে গিয়েছিলেন।  এখন কেন খোঁজ নেবে না? এটাতো ভোটের মতোই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’।
টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রচারণাও অনেক কম জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আশা করেছিলাম প্রচার নিয়ে। সেভাবে হয়নি।
টিটেনাস টিকা গ্রামের সব মায়েদের দেওয়া হয়। হেলথ ওয়ার্কার, মিডওয়াইফরা ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করেন।  হেলথ কমপ্লেক্সে ব্যনার টাঙানো হয়। নারীরা টিকা নিতে চান না, এটা ঠিক নয়।  কিন্তু করোনা টিকার বেলায় এমন কার্যক্রম আমি দেখছি না, বলেন ডা. তানজিনা।
নারীরা কেন টিকাদান কর্মসূচিতে কম জানতে চাইলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের একটা বড় অংশ শিক্ষিত নয়।  তারা টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে জানে না।  আবার একটা বড় অংশ গর্ভবতী বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। তারা কর্মসূচির বাইরে। সংখ্যাটা একেবারে কম নয়।
করোনার টিকা নিতে নারীর উপস্থিতি বাড়াতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।  নিবন্ধনে করিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে আনার ব্যবস্থাও করতে হবে।  এসব না করলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না, বলেন ডা. বিলকিস চৌধুরী।

ডিসি/এসআইকে/এমএস