উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সৈনিকরা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রায় সব দেশের নেতৃত্ব দেবে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কর্মরতরা। আর বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই উন্নত দেশ গড়ার সৈনিকরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তি শিক্ষায়, জ্ঞানভিত্তিক যে সমাজ গড়তে চাই- সেটা করার পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত হয়েছে; এটাই সবচেয়ে বড় কথা’।
রবিবার (১২ ডিসেম্বর) ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২১’ উদযাপন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শিশুরা ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরস্কার অর্জনে নিজের খুশি কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে- সেটা কাদের দিয়ে হবে? আজকে এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে নতুন প্রজন্মের যারা পুরস্কার পেলো, তাদের যে মেধা বিকাশের সুযোগ হলো; তাতে এখন আর আমার কোনও দুশ্চিন্তা নেই। আমি এখন বলতে পারি আমাদের দেশটা প্রযুক্তি শিক্ষায়, জ্ঞানভিত্তিক যে সমাজ গড়তে চাই, সেটা করার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি।
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই তাদের কাজ করছে বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা বিদেশে বসবাস করছেন তাদের রেখে যাওয়া বাড়িঘর দেখতে পাচ্ছেন। কিছু দিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছে, ধানমন্ডির একটা বাড়িতে চুরি হলো। বাড়ির মালিক লন্ডনে থাকে। সেখানে বসে তিনি দেখলেন। তার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের সিটি এসবি সেটা দেখে চোরকে ধরে ফেলেছে। এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যার শুভ ফলটা প্রবাসীরাও পাচ্ছেন।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্যটা ছিল নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ঘরে বসে ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। সেটা দিয়ে নিজেদের যেমন আর্থিক সচ্ছলতা আনবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সৈনিক আমাদের তৈরি হচ্ছে। সেই জন্য আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
সুবিধাবঞ্চিতদের হাতে সরকারের দেওয়া সুবিধা কোনো মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, কেউ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। আমাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১০৯টি পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল টকিং বুক তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নতুন সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার সবাইকে সেবা দিতে চেয়েছিল। সেটা দিতে পারছি। বাংলাদেশ সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে গ্রামের তৃণমূল পর্যন্ত সেই সেবাটা পৌঁছে গেছে। আজকে বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা মানুষকে দিয়ে দিয়েছি। ফলে আরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ব্রডব্যান্ড পৌঁছে গেছে।
দেশে ১৮ কোটি ১৩ লাখ সিম ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৩ কোটি সিমে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ১৬ বা ১৭ কোটি মানুষের দেশে যদি ১৩ কোটি সিমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে প্রায় সবার ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সার্ভিসটা আছে। সেই সুযোগটা সবাই পাচ্ছেন।
সরকারের আগামি দিনের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা যেমন মনে করি গার্মেন্টস থেকে সব থেকে বেশি রফতানি আয় হয়, কিন্তু সেখানে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। সেটা হলো আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রফতানি। সেখানে আমাদের মেধাবী সন্তানদের মেধা বিকাশের সুযোগ হবে। আমি মনে করি ডিজিটাল ডিভাইস রফতানি সব খাতকে ছাড়িয়ে যাবে। যদি এটা আমরা করতে পারি। তার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ রফতানি ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে।
দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সে (সজীব ওয়াজেদ জয়) স্কুলজীবন থেকে কম্পিউটার শিখতো। ঢাকায় এসে আমাকেও শেখাতো। (বাসায় আসার সময়) হোস্টেল থেকে কম্পিউটারটা সঙ্গে করেই নিয়েই আসতো। সেই ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারের মাধ্যমেই আমার হাতেখড়ি। তারই পরামর্শ ছিল- আমাদের দেশের মানুষকে কম্পিউটার শিক্ষা দিতে হবে। এজন্য খরচ কমাতে হবে, ট্যাক্স কমাতে হবে, সবকিছু করতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ