রাষ্ট্রপতি দলীয় স্বার্থের বাইরে যেতে পারেননি দাবি করে সংলাপ বর্জনে ইসলামী আন্দোলন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। তবে সংলাপ বর্জন করলেও একগুচ্ছ প্রস্তাবনা পেশ করেছে দলটি।  শনিবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম এসব তথ্য জানান।
সংলাপ বর্জন প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, সরকারের চেয়ে রাষ্ট্র অনেক বড় ধারণা।  সরকার দলের হয় আর রাষ্ট্র হয় সবার। সেই রাষ্ট্রের প্রধান যখন কোনো সংলাপের আমন্ত্রণ জানান, তখন তাতে সাড়া দেওয়া নাগরিক দায়িত্ববোধের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।  এই বোধ থেকেই আমরা ২০১২ ও ২০১৭ সালের সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু তিক্ত সত্য হলো, আমরা চরমভাবে হতাশ হয়েছি। দুই জাতীয় নির্বাচন এতটাই বিতর্কিত ও জালিয়াতিতে পূর্ণ যে, তা জাতি হিসেবে আমাদেরকে চরম হতাশ, বিব্রত ও লজ্জিত করেছে।  এই ইসির নিয়োগকর্তা মহামান্য রাষ্ট্রপতি এসব কলঙ্কময় নির্বাচনের দায়ে তারই গঠিত কমিশনকে কোনোরকম জবাবদিহিতার আওতায় আনেননি; কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।  ফলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপকে আমাদের কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়।  যে দল তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত করেছে, তিনি সেই দলীয় স্বার্থের বাইরে যেতে পারেননি।  জনআকাঙ্খার বিপরীতে গিয়ে এমন একটি আবেদনহীন ও তাৎপর্যহীন সংলাপে অংশ নেওয়াটা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সঙ্গত মনে করে না।
মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, অনেকেই ইসি গঠন নিয়ে আইন প্রণয়নের কথা বলছেন। আইন প্রণয়নের প্রস্তাব যৌক্তিক এবং এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও বটে।  কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইন প্রণয়ন করবে কে? একটি বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করা সাংসদরা?  যাদের নিজেদেরই নৈতিক ভিত্তি নাই। একটি দলান্ধ ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনের সুবিধাভোগী সাংসদরা কোনও স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আত্মমর্যাদাশীল ইসি গঠনে কার্যকর আইন প্রণয়ন করবে, এমন আশা করা বাহুল্য।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে হচ্ছে- সকল রাজনৈতিক সংগঠন ও সমাজের স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল গঠন করা, সেই কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন প্রস্তুত করে চলতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল গঠিত নতুন ইসির মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করে নতুন গ্রহণযোগ্য সংসদে ইসি আইন চূড়ান্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের সময় অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ইসি আয়োজিত প্রতিটি নির্বাচনের পরে কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন ও ইসির মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচনে কোনো ধরণের অসততা, অদক্ষতা ও পক্ষপাত পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। জনপ্রশাসন, আইন, স্বরাষ্ট্র ও তথ্যমন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের বাজেট, সচিবালয় ও পরিচালনা নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সহিংসতার প্রতিটি অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসিকেই নিতে হবে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করতে দেখা গেছে। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে তাদেরকে চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমুখ।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ