সংলাপে গণফোরাম-বিকল্প ধারা, ছিলেন না কামাল-বি চৌধুরী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
শীর্ষ দুই নেতাকে ছাড়াই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা সেরেছে গণফোরাম ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
রবিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দল ‍দুটি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাদাভাবে সংলাপে অংশ নেয়।
গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন সংলাপে যাননি; ছিলেন না বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই আলোচনায় রবিবার প্রথমে বসে গণফোরাম, দলের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান।
সংলাপে কামাল হোসেনকে না যেতে গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে আহ্বান জানিয়েছিলেন। অবশ্য গত ২৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে গণফোরাম তাদের আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের যে তালিকা পাঠায় তাতে কামাল হোসেনের নাম ছিল না।
দলের সভাপতি কামাল হোসেন কেন আসেননি- জানতে চাইলে মোকাব্বির সাংবাদিকদের বলেন, “জানেন তো উনি অসুস্থ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই উনি যান না”।
কামাল হোসেনের সম্মতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে তারা যোগ দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে এই সংসদ সদস্য বলেন, “কামাল হোসেন স্যার কখনোই এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। উনি বলেছেন, আপনারা গণফোরাম সিদ্ধান্ত নেন”। এরপর বর্ধিত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েই সংলাপে এসেছেন বলে জানান তিনি।
বিকল্পধারার সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব আবদুল মান্নান। বি চৌধুরী না গেলেও তার ছেলে দলের মুখপাত্র মাহী বি চৌধুরীও প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
সাংবিধানিক সংস্থা ইসির সদস্য নিয়োগে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও কোনো আইন না হওয়ায় প্রতিবারই রাজনৈতিক অঙ্গনে মতভেদ তৈরি হয়। জটিলতা এড়াতে গত দুবার সার্চ কমিটির ব্যবস্থা হলেও বিতর্ক থামেনি।
মো. জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দেওয়ার পর আবদুল হামিদও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছেন।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে তা গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন।
‘অর্থহীন’ উল্লেখ করে বিএনপি এই সংলাপ বর্জন করেছে। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে ‘তাৎপর্যহীন’ আখ্যা দিয়ে ইসলামী আন্দোলনও যায়নি আলোচনায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদও সংলাপে যায়নি।
মহাসচিব আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় বিকল্প ধারার প্রতিনিধি দল।মহাসচিব আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় বিকল্প ধারার প্রতিনিধি দল।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষ করে বেরিয়ে গণফোরামের নেতা মোকাব্বির খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বলেছি, অতীতে যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আইনি প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। তারা সরকারের আজ্ঞাবাহ হয়ে যায়”।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন জনগণের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য হয়নি’ বলে মনে করেন মোকব্বির।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন হলে তার অধীনে গণফোরাম নির্বাচনে অংশ নেবে কি না- প্রশ্নে মোকাব্বির বলেন, “আমরা গণফোরাম বসে সিদ্ধান্ত নেব। এককভাবে বলতে পারি না”। তিনি বলেন, “আমাদের দাবি লিখিতভাবে করেছি। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি সরকারের কাছে আমাদের দাবি পৌঁছে দেবেন”।
গণফোরামের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রপতি বলেছেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়াই এই আলোচনার লক্ষ্য। তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদদের অনুকরণীয় এমন কিছু করা দরকার যা থেকে নতুন প্রজন্ম শিক্ষা নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে’।
প্রেস সচিব জানান, গণফোরামের প্রতিনিধি দল নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়।
বিকল্প ধারার সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে জয়নাল আবেদীন বলেন, “তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ তিন দফা সুপারিশ পেশ করেন।তারা বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো দ্বারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম ও কমিশনারদের নাম প্রস্তাবের সুপারিশ করেন, যেখান থেকে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবেন”।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ