আ’লীগ কখনোই পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল।  আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে।
শনিবার (৭ মে) গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় গণভবনে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
 জিয়াউর রহমান নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার শুরু করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো ভোটে পেছনে ছিল না।  নানান ষড়যন্ত্র করে ভোটে পিছিয়ে রাখা হয়েছে।  নানা ষড়যন্ত্রের মাঝেও আমরা এগিয়েছি।  আ’লীগ কখনোই পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি।
তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, তারেক সবাই মানুষ হত্যা করেছে।  জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।  তাদের সময় ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টে।  পাকিস্তানি স্টাইলে মিলিটারি ডিকটেটরশিপ চালু করেছিল।
বিএনপির নেতৃত্ব কোথায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুজনই (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত।  এদের সঙ্গে ডান, বাম, অতিবাম এসে যুক্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অপরাধ কি জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কী?  কোথায় ব্যর্থ হয়েছি?
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে অতিজ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে, তাকিয়ে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে।  তারা বসে থাকে, কখন সিগন্যাল আসবে।  বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে, বিদেশ থেকে যেন তাদের ক্ষমতায় বসাবে।
সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।  তাদের কুকর্ম মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে’।
আওয়ামী লীগ নিয়মিত সম্মেলন করে জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, আমরা নিয়মিত সম্মেলন করি, সময় কাছে এসেছে, এর আগে কিছু কাজ আমরা করি।  ঘোষণাপত্রের অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেছি।  ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।  তিনি বলেন, ‘মানুষ এবার ঈদে নির্বিঘ্নে বাড়ি গেছে ও ফিরছে’।
মানুষ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উৎসব করায় অর্থ সরবরাহ বাড়ে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।  তিনি বলেন, ঈদে সবাই গ্রামের বাড়ি যায়।  বিশ্বে অনেক দেশে এটা কমে গেছে।  গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হচ্ছে।  তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করছি।  গ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছি।
তিনি বলেন, ‘পরাধীনদের অনুসরণ করব না।  নিজস্বভাবে দেশের উন্নয়ন করব, মাথা উঁচু করে চলব’।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা আরও অব্যাহত রাখতে হবে।  জনগণকে ধন্যবাদ- তারা বারবার ভোট দিয়েছে, টানা ৩ বার ক্ষমতায় রেখেছে।  অনেক উন্নয়ন হয়েছে, জীবনযাত্রার মান বেড়েছে।  আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।  ঈদের আগে ৩৩ হাজার ঘর দিয়েছি, জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার দেব।  বাকি থাকবে ৪৫ হাজার।  তাও দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না।  আমরা চাই- বাংলাদেশে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।  সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি’।
আওয়ামী লীগ কোনো মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে তৈরি সংগঠন নয়।  পঁচাত্তর পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগই আমি দেখেছি।  শত্রুরা কখনো ক্ষতি করতে পারে না, যদি ঘরের শত্রু বিভীষণ না হয়।  আওয়ামী লীগের মধ্যে সব সময় এটি দেখা গেছে।  আর এটি হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।  অত্যন্ত দুঃখজনক।  তবে এর মাঝেও আমরা এগিয়ে গেছি।  সংগঠনকে সুসংঘটিত করা এবং সেই সাথে সাথে ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য আমরা কি করব- সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে আমরা কাজ করেছি।
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল।  আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছি।  প্রকৃতপক্ষে সেভাবে আমাদের এখানে দাম বাড়েনি।  আর জিনিসপত্রের দাম সারাবিশ্বের বেড়েছে।  বিভিন্ন দেশের হিসাব নিলে দেখা যাবে কোথাও ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি।  ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি রয়েছে।  ভোজ্য তেল পাওয়া যাচ্ছে না।  লন্ডনে রেশনিং করে দেওয়া হয়েছে।  এক লিটারের বেশি কেউ তেল কিনতে পারবে না।  প্রত্যেকটা জিনিস সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নিতে হবে।  এর বেশি নিতে পারবে না।  সারা বিশ্বে এই অবস্থা।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরে আমাদের শিপিংয়ের ভাড়া এত বেড়ে গেছে যে যেসব দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি।  সেই আমদানির ওপর প্রভাব পড়ছে।  ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের পরে তার প্রভাব ইউরোপ-আমেরিকার উপর পড়েছে।  উদ্যোগ নিলে ভোজ্যতেল দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  এবং এদিকে তিনি দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।  ধানের তুষ দিয়ে তেল উৎপাদন হচ্ছে বলেও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে।  তার প্রভাব আমাদের উপরে আসতে পারে।  কাজেই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ