দারিদ্র্যের ফাঁদ পরাভূত বাংলাদেশে : সজীব ওয়াজেদ জয়

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ১৯৯৬ সালে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।  ২০২০ সালে তা ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।  চরম দারিদ্র্যের হার (যাদের দৈনিক আয় ১.৯০ ডলারের কম) ২০০৯ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ।  ২০২০ সালে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।  বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’র প্রশংসা করেছে।  এটিকে ‘দারিদ্র্য নিরসনের মডেল’ বর্ণনা করেছে।
উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও এর ইতিবাচক প্রভাবের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ।  আমেরিকান ম্যাগাজিন ‘ফরেন পলিসি’তে সম্প্রতি একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি।  পাঠকের জন্য সেটি ভাষান্তর করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্যের জন্য জনসংখ্যা যে দায়ী নয়, বাংলাদেশিরা তা ভালো করে জানে।  দারিদ্র্য কাটিয়ে ওঠার অন্যতম বাধা সম্পদ কিংবা প্রতিভার অভাব।  অন্য জায়গার মতো বাংলাদেশেও অতিদরিদ্ররা এটি মেনে নেয়ার অনন্ত চক্রে আটকা পড়ে।
তবে এটি পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে এবং বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে।  দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি দুর্বল জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে তুলে আনছে।  এ লক্ষ্যে সরকারের কার্যকর উদ্যোগগুলোর একটি হলো আবাসন প্রকল্প।  এই চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করে।  গৃহহীন এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে।  চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পের ৩০ হাজার ঘর দেড় লাখের বেশি পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দেবে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের মধ্যে আছে সড়ক নির্মাণ, খাওয়ার পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।  এটি কৃষিকাজ, পশুসম্পদ পরিচালনা এবং ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ দেয়।  বছরের পর বছর ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি পরিবার সহায়তা পেয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য একটি অর্জন হচ্ছে, পুরুষ-শাসিত সমাজব্যবস্থা থেকে দেশ বের হয়ে আসছে।  নারীদের এখন পুরুষদের সমান সম্পত্তির অধিকার রয়েছে।  জমিসহ আশ্রয়ণের সম্পদ স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানাধীন।  এই সম্পত্তি অধিকারের কারণে নারীরা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
একটি প্রাণবন্ত ও আধুনিক জাতি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স’ ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি করেছে।
যদিও অনেক কাজ বাকি, তবে বাংলাদেশি নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুযোগ ভোগ করছেন।  নারীর মর্যাদা উন্নত করার কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুই ক্ষেত্রেই সাফল্য পাচ্ছে।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ১৯৯৬ সালে ছিল ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।  ২০২০ সালে তা ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।  চরম দারিদ্র্যের হার (যাদের দৈনিক আয় ১.৯০ ডলারের কম) ২০০৯ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ।  ২০২০ সালে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।  বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির’ প্রশংসা করেছে।  এটিকে ‘দারিদ্র্য নিরসনের মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
দারিদ্র্যের হার কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।  ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন ৭১০ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬৪ ডলার হয়েছে।  এইচএসবিসি ব্যাংক সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি দেশ হবে।  কারণ গত ২০ বছরে প্রায় ৬ শতাংশ টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এখানে।
ভৌত অবকাঠামো এবং অনলাইন সংযোগকে শক্তিশালী করছে বাংলাদেশ। সরকারের অর্থায়নে পদ্মা সেতু একটি মেগা প্রকল্প; যা দেশের সঙ্গে গোটা অঞ্চলকে সংযুক্ত করে।  সেতুটি বাংলাদেশের জিডিপিকে বাড়তি ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে।  যানজট কমাতে এবং যাতায়াতের সময় বাঁচাতে রাজধানী ঢাকায় একটি মেট্রোরেল, বেশ কয়েকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ চলছে।
অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যও সাহায্য করছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক দশকে তিন গুণ বেড়ে ২০২১ অর্থবছরে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে, যা প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।  বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।  একসময় পশ্চিমে ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে উল্লেখিত একটি দেশের জন্য এটি এক অসাধারণ পরিবর্তন।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ এ বছর দরিদ্রতম দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।  ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার পথে রয়েছে বাংলাদেশ।
বাস্তব ফলাফল কখনও বিমূর্ত হয় না।  আলেয়া বেগমের কথাই ধরা যাক।  ৩০ বছর ধরে আলেয়া এবং তার পরিবার একটি খাল-পরিবর্তিত-আবর্জনার স্তূপের পাশে বাস করেছিল।  তার ছেঁড়া জামাকাপড় দারিদ্র্য জীবনের সাক্ষ্য দিচ্ছিল।  আলেয়ার আট ছেলে এবং এক মেয়ে মারা যায় একটি দুর্ঘটনায়।  এ ঘটনার পর পরই আলেয়ার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়।  তিনি একা, নিঃস্ব এবং আশ্রয়হীন ছিলেন।
আলেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে একটি বাড়ির জন্য নির্বাচিত হন। তার জীবনের গতিপথ বদলে যায়।  বাসস্থান এবং খাবারের ফলে আলেয়া এখন আর ক্ষুধার্ত বা জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে নেই।  বরং তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এমন গল্পগুলোর অসংখ্য পুনারাবৃত্তি বাংলাদেশে ঘটছে এবং আরও অনেক দেশেও ঘটার সুযোগ রয়েছে। সূত্র : নিউজবাংলা

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ