ভারতে অস্থিরতা কমছে : পররাষ্ট্র সচিব

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক : নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে ভারতে চলমান ‘অস্থিরতা’ ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল বুধবার এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটা (ভারতের) অভ্যন্তরীণ একটা বিষয়। এটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যাচ্ছে। ইনিশিয়ালি বেশ অস্থিরতার মধ্যে ছিল, আস্তে আস্তে সেটা কমে আসছে। আশা করি, এটা শান্তিপূর্ণভাবে তারাও ম্যানেজ করবে। এটা দুই দেশের অন্যান্য যে বিষয়গুলো আছে, সেটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটাও আমরা সকলে খেয়াল রাখব’।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজের কার্যালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে মাসুদ বিন মোমেনের এমন মন্তব্য আসে।

গত আগস্টে ভারতের আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হলে দেখা যায়, রাজ্যটির বাসিন্দা ১৯ লাখ মানুষের নাম সেখানে স্থান পায়নি। বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে আলোচনা ছিল ভারতীয় গণমাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতীয় সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনায় শতাধিক মানুষকে আটক করে পুলিশ। নভেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দেন, আসামের ওই তালিকা বাতিল করে পুরো ভারতে নতুন করে নাগরিকপঞ্জি হবে। এরপর দেশটির ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করা হয়।

আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকেই সহিংস বিক্ষোভ চলছে ভারতের বিভিন্ন অংশে। ওই অস্থিরতার মধ্যে ডিসেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ উচ্চ পর্যায়ের মধ্যে রয়েছে। আজও বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তাও আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে আছে’।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার উদ্যোগ নিয়ে এক প্রশ্নে নতুন পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আগে আমরা কেবল দ্বিপক্ষীয় পথে হেঁটেছি, তারপর আমরা বহুপক্ষীয় পথে হাঁটা শুরু করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে জবাবদিহিতা ও বিচারের পথও খুলছি। এগুলোর প্রত্যেকটা প্রত্যেকটার পরিপূরক। তারা (রোহিঙ্গারা) যাতে সসম্মানে ও স্বেচ্ছায় নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারে, এটা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেটা মাথায় রেখে সবগুলো পথের উদ্যোগ নেব আমরা’।

নতুন দায়িত্বে ‘টিমওয়ার্কে’ জোর দিচ্ছেন জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম কিভাবে আরও গতিশীল করা যায়, বিদেশে যে মিশনগুলো আছে, তাদের ওপর অর্পিত বিষয়গুলো আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ফল নিয়ে আসতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি’।

বিদেশে সব মিশনে মুজিববর্ষ পালনের নির্দেশ

বিদেশি সরকার, সুশীল সমাজ এবং প্রবাসীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের সব বৈদেশিক মিশনে মুজিববর্ষ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনপ্রধানদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মুজিববর্ষ পালন আমাদের জন্য শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়, বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক ভূমিকার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন’।

মুজিববর্ষকে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ‘অভাবনীয় সাফল্য’ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরার ‘একটি বিরাট সুযোগ’ হিসেবেও চিঠিতে বর্ণনা করা হয়েছে। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বর্তমান বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং অচিরেই বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কোঠা স্পর্শ করবে বলে আমরা নিশ্চিত। গত এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপি ১৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; মাথাপিছু আয় বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ, এবং বর্তমানে তা প্রায় দুই হাজার ডলার। বর্তমানে আমাদের জিডিপি ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০০৯ সালে ছিলো মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানি আয় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে আজ ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঊর্ধ্বে। গত দেড় দশকে বিনিয়োগ-জিডিপির শতকরা হার ২৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩১.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য’।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। বর্ষ গণনা শুরু হবে এ বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে। আর শেষ হবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবের মধ্য দিয়ে।