শিশু দিবস নিয়ে বিতর্ক

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
শিশুদের নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি দিন উদযাপনের জন্য শিশু দিবস পালন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংগঠন বছরের নানা দিনে শিশু দিবস পালন করায় এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে— আজ শিশু দিবস নাকি, আজকে কেন উদযাপন করা হচ্ছে। তাহলে শিশু দিবস আসলে কোন দিন? কোনটি জাতীয় শিশু দিবস, আর কোনটি আন্তর্জাতিক শিশু দিবস।
জানা গেছে, শিশু দিবসটি প্রথমবার ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে পালিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ ২০ নভেম্বরে উদযাপন করে থাকে। আবার আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুনের ১ তারিখে উদযাপন করা হয়। আবার অক্টোবরের শুরুতেও শিশু অধিকার সপ্তাহের মধ্যে একটা শিশু দিবস শোনা যায়। এমনকি বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে— শিশু দিবসটিকে উদযাপন করার।
জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর দিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের জন্যে ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ভারতেও ২০ নভেম্বরকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হতো। তবে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পর শিশুদের প্রতি তার চরিত্রের এই বিশেষ দিকটিকে স্মরণে রেখে সর্বসম্মতভাবে তার জন্মদিনটি ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর থেকেই ভারতে প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
তবে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামসহ শিশুদের নিয়ে কাজ করে- এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ। এরমধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। অক্টোবরের প্রথম সোমবার হয় বিশ্ব শিশু দিবস। বাকী দিনগুলোতে শুধু সপ্তাহের কর্মসূচি থাকে। এভাবেই এটি পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ইদানিং এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই সেপ্টেম্বরের ২৫/২৬ তারিখকে কন্যা শিশু দিবস মনে করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। ফলে এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশে শিশুদের উৎসব হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে ১৭ মার্চ ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করে। প্রথম জাতীয় শিশু দিবস উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে সরকারিভাবে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারিভাবে দিবসটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
দীর্ঘদিন শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন গওহর নঈম ওয়ারা। শিশু দিবস আসলে কোনদিন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ বাংলাদেশে শিশু দিবস। বাকিগুলো জাতিসংঘের দিবস। বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বললে বিভ্রান্তি হবে না’।
তিনি বলেন, ‘তবে এত শিশু দিবসের পরেও শিশু বিষয়ক এজেন্ডা স্পষ্ট হয় না। সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। এত শিশু নৌকাডুবিতে মারা গেলো, তাদের প্রতি আলাদা সতর্ক দৃষ্টি না দেওয়া, তাদের অধিকারগুলো নিয়ে আলাপ না তোলার কারণে এসব ঘটে। এগুলো নির্ধারণ করা জরুরি’।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. আলমগীর হোসেন একাধিক শিশু দিবসের বিষয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিন বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। কেবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে’।
চট্টগ্রামে শিশু অধিকার বাস্তবায়নে কর্মরত সংগঠন ভোরের আলো’র প্রতিষ্ঠাতা মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, আমাদের সংগঠনের বয়স ২২ বছর। তারও আগে আমিও ছোট ছিলাম। ছোট থেকেই বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের সাথে কাজ করেছি। জাতিসংঘ বলেন, ইউনিসেফ বলেন, বাংলাদেশ সরকার বলেন, সব সময়ই আমরা শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করেছি প্রতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর। এরমধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যা শিশু দিবস এবং অক্টোবরের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস। সরকারও সেভাবেই দিনটি পালন করতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর সবকিছুই এলোমেলো। চলতি বছর সরকারিভাবে শিশু অধিকার সপ্তাহ পালিত হচ্ছে ৩-১১ অক্টোবর। সম্প্রতি সময়ে অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি সরকারি উচ্চ পদস্ত কারও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সময় দেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ