চলে গেলেন মাসুম আজিজ, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ক্যান্সার আর রেহাই দিল না, একটি বছর রোগে শোকে ভুগে চিরবিদায় নিলেন একুশে পদকজয়ী অভিনেতা মাসুম আজিজ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চার দিন আগে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল এই অভিনেতাকে। সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এমন শোকের সংবাদটি নিশ্চিত করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম আজিজ মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে তিনি চার দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত অভিনয় করছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
মাসুম আজিজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ। এছাড়াও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও শোক জানিয়েছেন।
পৃথক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুম মাসুম আজিজের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অপর এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অভিনয়ের মাধ্যমেই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন গুণী শিল্পী মাসুম আজিজ। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, রাতে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে মাসুম আজিজের লাশ। মঙ্গলবার (আগামিকাল) সকাল ৭ টার দিকে রামপুরা, বনশ্রীর বাসায় নেওয়া হবে। এরপর বেলা ১১ টায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে মাসুম আজিজের কফিন।
বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজার পর লাশ নিয়ে যাওয়া হবে পাবনায়। সেখানে পৈত্রিক কবরস্থানে মাসুম আজিজের দাফন হবে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মাসুম আজিজ। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর থেকে বাসা আর হাসপাতালেই কাটছিল এ অভিনেতার দিনগুলো।
গতকাল রবিবারই তার চিকিৎসায় সরকারের পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেছেন, ‘দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসকদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হোক এবং তার (মাসুম আজিজ) দেখভালের দায়িত্ব সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বহন করুক’।
লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর কথাও ভাবছিলেন পরিবারের সদস্যরা। স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় দুশ্চিন্তা ছিল তাদের।
১৯৫২ সালে পাবনায় মাসুম আজিজের জন্ম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি থিয়েটারে সক্রিয় হন। প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন ১৯৮৫ সালে। ‘ঘানি’, ‘এই তো প্রেম’. ‘গহীনে শব্দ’, ‘গাড়িওয়ালা’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি।
মাসুম আজিজ একজন নাট্য নির্মাতা ও চলচ্চিত্রকার হিসাবেও পরিচিত। সরকারি অনুদানে তার পরিচালিত সিনেমা ‘সনাতন গল্প’ মুক্তি পায় ২০১৮ সালে। মঞ্চে মাসুম আজিজের রচনা ও নির্দেশনায় সবশেষে নাটক ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’। ঢাকা পদাতিক এ নাটকটি নিয়মিত মঞ্চায়ন করছে।
অভিনয়ে অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক পান মাসুম আজিজ; ‘ঘানি’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসাবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ