ভোটের আগে কমল ইসির ক্ষমতা, আরপিও সংশোধনী বিল পাস

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ভোট বন্ধ বা বাতিলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে। বিরোধী দলের সদস্যরা এতে আপত্তি জানালেও বিলটি পাস হয়।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, এ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এ বিলটি বিরোধী দলের সদস্যদের বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠ ভোটে নিষ্পত্তি হয়।
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
আরপিওর সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে ফেলার পর কোনো আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে ফলাফল বাতিল করে ওই সব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে ইসি। বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি মনে করে তারা আইনি নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে ইসি। এখন এই ক্ষমতা সীমিত করে ইসিকে শুধু ভোটের দিন সংসদীয় আসনের (অনিয়মের কারণে) ভোট বন্ধ করতে পারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনিভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্র মতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। তবে এ বিলে ইসিকে পুরো আসনের ফলাফল স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আইনে বলা হয়েছে, যেসব ভোটকেন্দ্রে (এক বা একাধিক) এসব অভিযোগ থাকবে, ইসি শুধু সেসব কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন করতে পারবে।
সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার (এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’। আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। এ সংশোধনী পাস হলে নির্বাচন কমিশন অনিয়মের কারণে শুধু ভোটের দিন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ‘ইলেকশন’ শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারতো। তাই এখানে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে।
এছাড়া সংশোধিত আরপিওতে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সরকারি সেবার বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে মনোনয়ন দেওয়ার সাত দিন আগে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হতো।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ