সিটি নির্বাচন পেছাতে অবরোধ-অনশন কর্মসূচি

সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশ গুপ্তসহ ঐক্যপরিষদ নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা ব্যুরো >>>
ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে আছে ২০ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল, ২৪ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅবস্থান, ২৫ জানুয়ারি অবরোধ এবং ২৭ জানুয়ারি প্রতীকী অনশন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর পরবর্তীতে ২৮ জানুয়ারি কমিশনের ভূমিকার পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চা পুণরায় বৈঠকে মিলিত হয়ে পরবর্তী করণীয় ঘোষণা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-র ১০ নম্বর বিধির (১)(ঘ) উপবিধিতে বলা আছে ‘ভোট গ্রহণের তারিখ, যাহা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখের অন্তত ১৫ (পনের) দিন পরে হইবে’। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ ছিল ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আর প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে ১০ জানুয়ারি শুক্রবার। সেক্ষেত্রে এ নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হতে পারত ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন ধার্য করেছে ৩০ জানুয়ারি। যদি নির্বাচন কমিশন ১৫ (পনের) দিনের দিন নির্বাচনের তারিখ ধার্য না করে এর ৫ (পাঁচ) দিন পরে করতে পারে, সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বলা যায়, নির্বাচনের তারিখ ধার্যে কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ হতে শুরু হয়ে তা ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত চলবে।
লক্ষ্যণীয় বিষয়- এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার মাঝে মাঝে ফাঁকা দিন রয়েছে। অতীতেও আমরা লক্ষ্য করেছি, রাজনৈতিক হরতাল ইত্যাদি কর্মসূচির পরপরই পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের তারিখ পুণনির্ধারণ করা সম্ভব ২৫ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন ধার্য করে কিংবা ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য বাংলা (আবশ্যিক)- ১ম পত্র ও সহজ বাংলা ১ম পত্রের তারিখটি পিছিয়ে দেয়া হলে অথবা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের যেকোনো একটি দিনে যেদিন পরীক্ষা থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চার মাস আগে শারদীয় দূর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর দিনে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষণার পর প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে আমরা আশা করেছিলাম, পরবর্তীতে হয়তো নির্বাচন কমিশন এহেন দুঃখজনক ঘটনার পুণরাবৃত্তি করবে না। কিন্তু এবারে সরস্বতী পূজোর দিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা থেকে আমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে, দূর্গাপূজো ও সরস্বতী পূজোর দিনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা একই সূত্রে গাঁথা। এর মধ্য দিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতি বিবেচনায় আনতে নির্বাচন কমিশনের অক্ষমতা আরেকবার জাতির সামনে পরিস্ফুটিত হয়েছে।

নির্বাচন পেছানোর দাবিতে বেশকিছুদিন ধরে আন্দোলনে আছে শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য মোর্চাভুক্ত ৩১টি সংগঠনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেন প্রফেসর ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক (ঐক্য পরিষদ), সাংবাদিক বাসুদেব ধর (পূজা উদযাপন পরিষদ), অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী (শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্ট), সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা (জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন), পলাশ কান্তি দে (জাতীয় হিন্দু মহাজোট), মনোরঞ্জন মন্ডল (জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি), ভদন্ত সুনন্দপ্রিয় ভিক্ষু (বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশন), নির্মল রোজারিও (খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন), সঞ্জিব দ্রং (আদিবাসী ফোরাম), রামানন্দ দাস (ঋষি পঞ্চায়েত ফোরাম), সন্তোষ শর্মা (স্বজন), অ্যাড. অশোক ঘোষ (মাইনোরিটিজ সংগ্রাম পরিষদ), গোবিন্দ চন্দ্র চৌধুরী (জাতীয় হিন্দু নাগরিক কমিটি)। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ