২৫ মাস পর ভিন্ন কারাগারে বেগম জিয়া

ঢাকা ব্যুরো, দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দুই শর্তে দীর্ঘ ২৫ মাস পর মুক্ত হয়ে নিজের বাসভূমে ফিরলেও ভিন্ন আরেকটি কারাগারেই থাকছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার (২৫ মার্চ) চারটা ২০ মিনিটের দিকে কারামুক্ত খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ পৌঁছেছেন। ২৫ মাসেরও বেশি সময় পর নিজ বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে তিনি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় হাসপাতালে দলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। কাওরান বাজার পর্যন্ত গাড়ি বহর আসতে প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা লেগে যায়। ভিড়ের কারণে পুলিশ দুই দফা লাঠিচার্জ করে।
এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে। সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে তাকে ২ শর্তে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শর্ত অনুযায়ি তিনি গুলশানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। এই সময়ে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। বুধবার খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত সংক্রান্ত ফাইলে সই করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বয়স ও মানবিক বিবেচনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্ত হলো- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। প্রথমে তাকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ দাবি করে তার পরিবার ও বিএনপির তরফে মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। তার মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। সর্বশেষ বয়স ও মানবিক বিবেচনায় তাকে মুক্তি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেগম জিয়া আপাত দৃষ্টিতে মুক্তি পেলেও তাকে সরকার অনেকটাই লাগাম দিয়ে রেখেছে। তিনি হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজভূমে গেলেও তিনি কিন্তু বন্দীই থাকছেন। তিনি বের হতে পারবেন না এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। শুধু পার্থক্য এতোটুকুই বন্দী জীবনে তাঁর সাথে কেউই দেখা করার সুযোগ পেতেন না। এখন দল ও পরিবারের যে কেউ চাইলে দেখা করতে পারবেন। তবে সেখানেও সরকারের একটা হস্তক্ষেপ থাকবে বলেই আপাত দৃষ্টিতে বোঝা যাচ্ছে। অর্থাৎ কাগুজে নির্দেশে তিনি মুক্ত হলেও ভিন্ন ধরণের আরেকটি জেলখানায় তিনি যাচ্ছেন- এটিই এখন প্রতীয়মান।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ