পাপিয়ার ‘অবৈধ সম্পদের’ তথ্য পেয়েছে দুদক, হোটেল কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে প্রচুর দামি পোশাক ও ঘরি!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার প্রায় ৪ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকারীরা।  দুদকের উপ পরিচালক শাহীন আরা মামতাজ আজ রবিবার (২৮ জুন) বলেন, ‘অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে।  পাপিয়ার বিরুদ্ধে ৪ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের তথ্য আমাদের হাতে আছে।  কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে, সেগুলো শেষ হওয়া মাত্র তার বিরুদ্ধে মামলা হবে’।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।  পরে ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।  সে সময় র‌্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার উপরে।
গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে জাল নোটের একটি এবং অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব।  আর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে।  এরপর দুদকও পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে।  উপ-পরিচালক শাহীন আরা মামতাজ বলেন, ‘পাপিয়াকে অন্য একটি সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।  সেই সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে দুদকের পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  এরপর আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করব’।  এই কর্মকর্তা জানান, ওয়েস্টিন হোটেলের যে তিনটি কক্ষ পাপিয়া ও তার সহযোগীরা ব্যবহার করতেন, গত ১৫ মার্চ সেগুলো পরিদর্শন করেছেন তিনি।  ওই কক্ষগুলোর মালামালের ইনভেন্ট্রি তৈরি করেছেন।
ওই তিন কক্ষের মালামাল সরাতে গেলে তিনটি ট্রাক লাগবে জানিয়ে শাহীন আরা মামতাজ বলেন, ‘অবাক হওয়ার মত বিষয় যে- সেখানে একশ জোড়া স্যান্ডেল পাওয়া গেছে।  বেশির ভাগই পাপিয়ার।  এছাড়া প্রচুর দামি দামি পোশাক ও ঘড়ি পাওয়া গেছে’।  এছাড়া পাপিয়া নিজ হাতে সই করে কত টাকা হোটেলে বিল দিয়েছেন, সেই সব বিলের কপিও সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘তার গ্রামের বাড়িও পরিদর্শন করতে হবে।  তারপরই মামলাটি করা হবে’।
তিনি জানান, পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ছাড়াও আরও নয়জন থাকতেন ওয়েস্টিনের ওই কক্ষগুলোতে।  হোটেলে থাকতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হয়।  পাপিয়া আর সুমনের ছাড়া বাকি নয়জন যে জাতীয় পরিচয়পত্র হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিল, দেখা গেছে, সেগুলো ছিল ফেইক।  অর্থাৎ পাপিয়ার সাঙ্গপাঙ্গরা ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে হোটেলে থাকত।
এদিকে পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আগের মামলাগুলোর তদন্ত থমকে আছে করোনা-ভাইরাস মহামারির কারণে।
র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আর মাদক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পাপিয়াকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।  কিন্তু একদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর পাপিয়ার জ্বর ও সর্দি হওয়ায় তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।  ওই একদিন জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।  শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, যে কোনো সময় আবার রিমান্ডে নিয়ে পাপিয়াকে বাকি ১৩ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।  কিন্তু বর্তমানে করোনা-ভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে।
সিআইডির দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে ডিআইজি ইমতিয়ার আহমেদ রবিবার বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলার কাজ পুরোদমে চলছে না।  তবে ভার্চুয়াল কাজকর্ম চলছে।  কিছু কিছু তদন্ত করতে হলে কারও কারও কাছে যেতে হবে, কিন্তু তাদের কাছেও তো বর্তমান পরিস্থিতিতে যাওয়া যাচ্ছে না’।  এ মামলাতেও পাপিয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতো…, একটু সময় লাগবে’।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়াকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে।  সেখানকার ডেপুটি জেলার অলিভা শারমিন বলেন, ‘তার কোনো সমস্যা এখন নেই, তিনি সুস্থ আছেন’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ