দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
একজন কাপড় দোকানের কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। শনিবার (২১ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় এক ফ্লাইটে মনিরের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনির দুবাইতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছিল। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার এড়াতে পারলেই শনিবার বেলা ১১ টায় অ্যামির্যাটস এয়ারলাইন্সের (EK-585) ফ্লাইটে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার নিজ বাসা থেকে গোল্ডেন মনিরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণ, বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ এক কোটি নয় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন দুটি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হয়, যার প্রতিটির বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। তার ‘অটো কার সিলেকশন’ নামে গাড়ির শো-রুম থেকে আরো তিনটি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট, ফ্ল্যাটের মালিক এই গোল্ডেন মনির। রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে অসংখ্য প্লট হাতিয়ে নেন তিনি। তবে প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্লট ও ফ্ল্যাটের কথা স্বীকার করেছেন মনির।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরের বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। এর আগেও গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে দুদক ও রাজউকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মনির মূলত একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী ও স্বর্ণের চোরাকারবারি। এ থেকেই মনির পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ হিসেবে।
জানা গেছে, গোল্ডেন মনির নিজের নিরাপত্তায় লাইসেন্সকৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখতেন। এর মধ্যে একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান রয়েছে। তবে বৈধ দুটি অস্ত্রের পাশাপাশি একটি অবৈধ পিস্তলও তার দখলে ছিল। যেটি তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশ যাওয়ার জন্য নিজের লাইসেন্সকৃত দুটি অস্ত্র বাড্ডা থানায় জমাও দিয়েছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, গোল্ডেন মনিরের অস্ত্র জমা দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে গোল্ডেন মনিরের পরিবারের দাবি, তিনি চিকিৎসার জন্য প্রায়ই দুবাই যান। এবারো চিকিৎসা করাতে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল।
এদিকে মনিরের দুবাই যাত্রার বিষয়টি স্বীকার করেছে তার ছেলে মোহাম্মদ রাফি হোসেন। তিনি বলেন, বাবা প্রায়ই চিকিৎসার জন্য দুবাই যান। এবারো চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন। এজন্য তার ফ্লাইট কনফার্ম ছিল। এর আগেই র্যাব বাবাকে গ্রেফতার করে।
তবে মনিরের শারীরিক সমস্যা বা চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিয়ে পারেননি রাফি হোসেন। বাবার অভিযোগের বিষয়ে রাফি বলেন, আমার বাবা নির্দোষ। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাবার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেয়া হচ্ছে সব ভিত্তিহীন। তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। আমরা আইনিভাবে সব মোকাবিলা করবো। সেখানেই প্রমাণ হবে বাবা দোষী কি-না।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন, অস্ত্র আইনে ও বৈদেশিক মুদ্রা রাখায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা করবে র্যাব। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদক, সিআইডি, বিআরটিএ, এনবিআর, রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হবে।
গোল্ডেন মনিরকে আটকের পর র্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
ডিসি/এসআইকে/এমএসএ