যে কারণে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দীর্ঘ ২৪ বছর আগে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও চার্জশিটভুক্ত এক নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর গুলশানের ২৫/বি ফিরোজা গার্ডেন নামের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।  র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মইন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
আশীষ রায় চৌধুরী নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১ নম্বর আসামি।  তিনি একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন পদে ছিলেন।  সর্বশেষ তিনি জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ছিলেন।
১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।  এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন।  সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এই হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়।  এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।
র‌্যাব জানায়, মূলত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী গুলশানের সেই এলাকার সমাজের পক্ষ হয়ে চাচ্ছিলেন ট্রাম্পস ক্লাবটি বন্ধ হোক।  কারণ সেখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ মাদকের আসর বসতো।  আর এটি চলুক তা সোহেল চৌধুরী চাইতেন না।  এ জন্য তিনি বেশ কয়েকবার এই ক্লাবটি বন্ধ করার চেষ্টা করেন।  আর এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আশিষ ও বান্টির সাথে তার কয়েকদফা কথা কাটাকাটি হয়।  এক সময় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে সোহেল চৌধুরীর সরাসরি এই বিষয়ে কথা হয়।  তা এক পর্যায়ে তর্কে এবং পরে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।  সেই ক্ষোভে আজিজ মোহাম্মদ, বান্টি ইসলাম ও আশিষ তাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন।  ট্রাম্পস ক্লাবটিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের।  এক পর্যায়ে ইমনকে চুক্তি করা হয় সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করার।
ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন।  এ সময় ভেতরে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়।  রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন।  তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।  আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।
আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ অভিযোগ গঠন করেন।  অভিযোগ গঠনের পর আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।  রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করেন এবং এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন।
গত ২৪ মার্চ এ মামলায় আদালতে হাজিরা দেন জামিনে থাকা আসামি ফারুক আব্বাসী।  জামিনে থাকা অপর আসামি আদনান সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে হাজিরার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করেন আদালত।
এছাড়া কারাগারে থাকা আসামি তারিক সাঈদ মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়।  তবে পলাতক রয়েছেন আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই, সানজিদুল হাসান, সেলিম খান ও হারুন অর রশিদ।  তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন সোহেল চৌধুরী।  ওই একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী দিতিও।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ