ভারত থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে ৮০০ রোহিঙ্গা

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে শ্রমিকের কাজ করছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলীবাজার এলাকার রোহিঙ্গা মো. আমিন। স্ত্রী ও পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সেখানেই থাকতেন, পেয়েছিলেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) শরণার্থী কার্ডও।
সেই কার্ড দিয়েই শ্রমিকের কাজ করতেন আমিন।  তবে পরিস্থিতির শিকার হয়ে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরেছেন।  এর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন আমিন।  কিছুদিন পর পরিবার নিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে পাড়ি জমান তিনি।
জানা গেছে, গত ২০-২৫ দিনে ভারত থেকে পালিয়ে উখিয়া ও টেকনাফে অন্তত ৮০০ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।  তাদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জনকে একটি ট্রানজিট কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।  এর বাইরেও প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা জানান, ভারত থেকে আরো অন্তত ৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অনুপ্রবেশের চেষ্টায় আছেন।  তারা ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন।  অনেকের কাছেই ইউএনএইচসিআর এর শরণার্থী কার্ড আছে।
রোহিঙ্গা আমিন জানান, ঈদের তিনদিন আগে পরিবার নিয়ে ভারতের কলকাতা থেকে দালালের মাধ্যমে সিলেট সীমান্তে পৌঁছান।  রাতে শ্রীমঙ্গল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন।  এরপর ৪ মে সকালে কক্সবাজার শহরে ও ৫ মে সন্ধ্যায় পৌঁছান উখিয়ায়।
ভারত থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, সেখানে বিভিন্ন রাজ্যে রোহিঙ্গারা স্থানীয় লোকজনের কাছে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।  নির্যাতন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ায় শত শত রোহিঙ্গা পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসছেন।
গত ২০-২৫ দিনে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন বলে তারা দাবি করেন।  তাদের মধ্যে অনেকেই উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন।
রোহিঙ্গারা আরো জানান, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তারা এসে কলকাতায় জড়ো হচ্ছেন।  সেখান থাকে দালালরা তাদের পৌঁছে দেয় সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তের কাছে।  পরে ৫-৬ জনের দলে ভাগ করে রোহিঙ্গাদের কাঁটাতারের বেড়ার নিচ দিয়ে বাংলাদেশ ঠেলে দেওয়া হয়।  এরপর বাংলাদেশি দালালরা তাদের কক্সবাজারে পৌঁছে দেয়।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক মো. নাঈমুল হক জানান, গত ২০-২৫ দিনে প্রায় ৮০০ রোহিঙ্গাকে জেলা পুলিশ কক্সবাজার শহর ও উখিয়া থেকে আটক করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে।  তাদের মধ্যে ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গারাও আছেন।  কয়েকশ রোহিঙ্গাকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে ট্রানজিট কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, এসব রোহিঙ্গার বিষয়ে সরকারি বিধিবিধান মেনেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত ৪ মে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪৫৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ।  এছাড়া ৫ মে ৫০ জন, ৬ মে ২৮৭ জন ও ৭ মে ২৫২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।  আটককৃতদের অধিকাংশ ভারত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ