পিকে হালদারের বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পশ্চিমবঙ্গে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার ওরফে পিকে হালদার ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার অর্থ পাচারের শিকড় উদ্ধার হয়েছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন প্রান্তে।  শুক্রবার (১৩ মে) রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে ৯ জায়গায় হানা দিয়েছে ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টার অর্থাৎ ইডি।
হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো অবৈধ টাকায় পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে পিকে’র বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়া অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা।  এদিন আর্থিক দুর্নীতির খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উঠে আসে প্রকৃত রহস্য।
জানা যায়, পিকে হালদার অর্থাৎ প্রশান্ত কুমার হালদার এবং সুকুমার মৃধা প্রকৃতপক্ষে অশোকনগরের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী।  এতেই ইডির কাছে প্রায় স্পষ্ট দুজনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশেই এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এই বিপুল আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে।
ওই অঞ্চলে পিকে হালদারের নবজীবন পল্লীতে সুবিশাল বিলাসবহুল বাগানবাড়ি আছে।  ঠিক তার পাশেই আছে সুকুমার মৃধার আরেক বিলাসবহুল বাগান বাড়ি।  সুকুমার একজন মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানে পরিচিত হলেও তার আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ছিল এলাকাবাসীর মধ্যে।
শুক্রবার(১৩ মে) ইডি’র তদন্তে জানা যায়, শুধুমাত্র অশোকনগরে একাধিক সম্পত্তি কিনেছে পিকে এবং সুকুমার।  এদিন অশোকনগরের ৩টি বাড়িতে একযোগে তল্লাশি শুরু করে ইডি।  যার একটিতে থাকতেন সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতার জামাই।  তাকে জেরা করছে ইডি।
অন্যদিকে, অশোকনগরের বিলাসবহুল বাড়িতে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার ও তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা শুরু করেছে ইডি।
স্থানীয়রা জানতেন, প্রণব কুমার হালদার ছিলেন সরকারি কর্মচারী।  তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এবং ছোট ছেলে মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত।  আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির দিকে তারাও ছিল ইডির নজরে।
তাদের চারবিঘা জমির উপর বিলাসবহুল বাড়িটির কারণে এলাকাবাসীর মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।  এনআরবি গ্লোবালের বেআইনি টাকা হুন্ডীর মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে ইডির অনুমান।
সূত্রের খবর, কলকাতা ছাড়াও দিল্লী, মুম্বাই এবং ভারতের অন্যান্য শহরেও পিকে এবং সুকুমার জুটির বিনিয়োগ আছে বলে অনুমান করছে ইডি।  আপাতত পিকে এবং সুকুমার- দুই পরিবারকে জেরা করে সেই সম্পত্তির হদিস খুঁজছে ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় এই সংস্থা।  এছাড়া অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে এই যুগলের।
কলকাতায় যেভাবে এই জুটির বেআইনি সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি- তাতে বলা যায়, এনআরবি গ্লোবাল কাণ্ডে পাচারের বড় টাকার হদিসই মিলছে।  তবে এই সম্পত্তি ক্রয়ের টাকা কোন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ফিরবে সেটি এখন দেখার বিষয়।
এদিকে সুকুমার মৃধার জামাই সঞ্জীব হাওলাদার এদিন সংবাদ মধ্যমের সামনে জানায়, প্রায় দু’বছর আগে শেষবার তার শ্বশুর অর্থাৎ সুকুমার মৃধা অশোকনগরের এই বাড়িতে এসেছিলেন।  তবে সুকুমার মৃধার জামাই হিসেবে সংবাদমাধ্যমের সামনে এদিন সমস্ত সম্পর্ক এড়িয়ে যান সঞ্জীব হাওলাদার।
সঞ্জীব জানান, আর পাঁচ জনের মতই অস্পষ্টভাবে বাংলাদেশ আর্থিক তছরুপের ঘটনা তিনি শুনেছিলেন।  তবে স্পষ্টভাবে তিনি কিছু জানেন না।
অপরদিকে, স্থানীয়রা জানতেন সঞ্জীব হাওলাদার নিজেও বাংলাদেশী নাগরিক।  সুকুমার যে বাড়িতে থাকছিলেন সেটি মূলত পিকে হালদারের ভাই এনআরবি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত পৃথ্বীশ কুমার হালদারের।  স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রাণেশ হালদার নামে পরিচিত ছিলেন।  ৩-৪ বছর আগে পৃথ্বীশ তার বাড়িটি সুকুমার মৃধার নামে হস্তান্তর করে দেয়।
ইডি সূত্রে খবর, বাড়ি হস্তান্তরের সব কাগজপত্র তল্লাশিতে মিলেছে।  স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী হলেও পিকে এবং সকুমার জুটি স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রীর সঙ্গে চরম ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছিলেন।
এদিন পিকে এবং সুকুমারের বাড়ি ছাড়াও ইডি তল্লাশি চালিয়েছে আরেক সহযোগী, স্বপন মিত্রের বাড়িতে।  অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র পিকে’র হুন্ডিতে আনা অবৈধ টাকা পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত।
সূত্রের খবর, এদিন স্বপনের বাড়ি তল্লাশি চালানোর পরে মেলে একাধিক নথি।  এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তাকে আটক করেছে ইডি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ