কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন ৫০ হাজার পরিবার। যাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে প্রশাসনের পক্ষে প্রচারণা চালালেও জমি বেদখল আর লুটপাটের আংশকায় বাড়ি ছাড়তে রাজী নন তারা। আবার অনেকের রয়েছে ভিন্ন যুক্তি। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে অনেকেই সরকারিভাবে পুনর্বাসনের দাবিও জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বৃষ্টিতে নিরাপদে আশ্রয়রতদের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আর ভূমিহীন হলে সরকারের পক্ষে উদ্যোগ নেয়া হবে।
বনবিভাগের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাস করে। যার মধ্যে কক্সবাজার শহর ও আশে-পাশের এলাকায় রয়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার। যেখানে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘর করে বসতির দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে এসব ঘর। কক্সবাজার শহর ও আশে-পাশের কলাতলী, হিমছড়ি, বাসটার্মিনাল, রুমালিয়ার ছড়া, জেলগেইট, দরিয়ানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে চরম ঝুঁকি।
বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে আশংকায় রবিবার রাত থেকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পাহাড় চালানো হচ্ছে প্রচারণা। এসব ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানানো হয়। কিন্তু এতে আশ্রয় কেন্দ্রে না যাওয়ার নানা আজুহাত রয়েছে তাদের।
শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকায় বসবাসকারি পেকুয়ার বাসিন্দা আবদুল গফুর জানান, গত ২৫ বছর ধরে তিনি শহরে রয়েছেন। তবে খাজামঞ্জিল এলাকার পাহাড়ে অল্প জমি কিনেছেন ৫ বছর আগে। ওখানে পরিবার নিয়ে রয়েছেন তিনি। তিনি জানান, পাহাড়ে বৃষ্টিতে ঝুঁকি থাকলেও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা ঘর ছেড়ে অন্যত্রে গেলে একটি পক্ষ তার ঘরসহ জমিটি দখল করে নেবেন। সরকারিভাবে বিকল্প কোনো জমিতে ঘর দিলেই তবে তিনি যাবেন।
নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে ঘর চুরি করে মালামাল লুট করার আশংকার কথা বলেছেন একই এলাকার আমেনা খাতুন। তিনি জানান, এলাকায় একটি চক্র সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মালামাল লুট করে থাকে। তাই ঝুঁকি জেনেও অন্যত্রে যেতে রাজী নন তিনি।
সরকারি তথ্যমতে, কক্সবাজারে পাহাড় ধসে গত ৫ বছরে মারা গেছেন দেড় শতাধিক মানুষ। শুধু মাত্র গত বছর মারা গেছেন ২১ জন। এবার বৃষ্টির শুরুতেই গত রবিবার রাতে মহেশখালীতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান কক্সাজারের অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহর ও আশে-পাশের এলাকা ছাড়াও সকল উপজেলায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। তাদের ওখানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। বৃষ্টি আরো বাড়লে বাধ্য করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, পাহাড়ে বসবাসকারিরা সত্যি ভূমিহীন হলে সরকারিভাবে বিকল্প জমি বরাদ্ধ দেয়ার চিন্তা চলছে। তবে আপাতত ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস না করে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ