কাউন্সিলরের স্থলে স্বাক্ষর করলেন কাউন্সিলর প্রার্থী!

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চলমান করোনাভাইরাস সংকটে দেশের গরীব ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের বিত্তবানরাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।  নানানভাবে করে যাচ্ছেন ত্রাণ সহায়তা।  কিন্তু এরমধ্যে রয়ে যাচ্ছে নানা ভুল ও অপরাধ।
 সারাদেশের মতো নগরীর বাকলিয়ায়ও বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিবর্গ দান করে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে-আড়ালে।  কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর গরীব ও রোজাদারদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন।  সকলের মতো সাবেক মেয়র এম. মনজুর আলমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ও রোজাদারদের জন্য ত্রাণ ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে।  বাকলিয়া থানাধীন ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়ায় তাদের এই ইফতার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে এলাকায় ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি।  এলাকাবাসীর মনে ঘুরছে নানান প্রশ্ন।  অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন।
সঠিকভাবে বন্টনের জন্য একটি কার্ডও ছাপিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।  আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম. আবু তাহের ও নির্বাহী পরিচালক এম. মনজুর আলমের ছবিযুক্ত কার্ডটিতে ত্রাণ গ্রহিতার তথ্য লিপিবদ্ধের ঘর রয়েছে।  কার্ডটির নিচের দিকে দুইজনের স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে।  এরমধ্যে একজন সমাজসেবক ও অন্যজন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর।  কিন্তু ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষরের স্থানে স্বাক্ষর করছেন সদ্য স্থগিত চসিক নির্বাচনে এক নারী কাউন্সিলরপ্রার্থী যিনি এখনো নির্বাচনই করতে পারেননি।  তিনি হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শাহীন আক্তার রোজী।  ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়ার সংরক্ষিত ওয়ার্ড- ৬ এ তিনি কাউন্সিলরপ্রার্থী।  এখানে বর্তমান কাউন্সিলর ফারজানা পারভীন। তিনি এবার নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষরের জায়গায় নিজে স্বাক্ষর করা প্রসঙ্গে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী শাহীন আক্তার রোজীর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি তার এক কর্মীর মাধ্যমে দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ত্রাণ সামগ্রীগুলো আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন থেকে তার বরাবরেই এসেছে।  ঐ কার্ডের সাথে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কোনো সম্পর্ক নেই।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব ইয়াসিন চৌধুরী আছু দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সাথে কথা বলেছি।  তারা বলছে- এটা কোনো সরকারি ত্রাণ না।  আমরা যাকে খুশি তাকেই ত্রাণ পাঠাতে পারি।
তবে এলাকার সচেতন মহল বলছেন, শাহীন আক্তার রোজী এখনো প্রার্থী।  তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর কাজটি করলে কেউ তাকে বারণ করতে পারতো না।  কেউবা আবার বলছেন- তার স্বাক্ষরটি সমাজসেবকের জায়গায় করলেও হতো।  এতে করে এলাকাতে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হতো না।  অথবা যারা কার্ডটি ছাপিয়েছেন তারা কার্ডে কাউন্সিলর শব্দটি না লিখলে পারতেন।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মো. কামাল উদ্দীন নামে একজনের প্রোফাইল ঘুরে দেখাগেলো এই বিষয়ে তার একটি পোস্টে অনেকেই কাউন্সিলরের স্বাক্ষরের স্থানে কাউন্সিলরপ্রার্থীর স্বাক্ষরের এর বিপক্ষে মন্তব্য জানিয়েছেন।
বাকলিয়ার বর্তমান সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারজানা পারভীন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, এটি যদি দলীয় বিষয় হয় তাহলে এখানে কাউন্সিলরের স্বাক্ষর এর বিষয়টি উল্লেখ না করলেইতো পারতেন।  ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ এমন ভুল করে থাকলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের দেখার বিষয়।  কারণ যিনি ত্রাণ পাঠাচ্ছেন তিনি সাবেক মেয়র ছিলেন, আর যিনি সংগ্রহ করেছেন তিনি এইবারের কাউন্সিলর প্রার্থী।  তারা দু’জনই অনেক কিছুই জানেন আর নিয়ম-কানুনও আশা করি কম জানেন না।
মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করলে মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সারোয়ার আলম দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ত্রাণগুলো আমরা দক্ষিণ বাকলিয়ার কাউন্সিলর প্রার্থী রোজীকে দিয়েছি।  স্বাক্ষরের বিষয়টিতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না।

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ