নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নগরে সু-কৌশলে গভীর রাতে ও ভোরে কাটা হচ্ছে পাহাড়। পাহাড় কাটার এই মাত্রা বেড়েছে চলমান করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট লকডাউনে। চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদের জালালাবাদ, এস এস খালেদ রোডের রীমা কমিউনিটি সেন্টারের সম্মুখস্থ পাহাড়, উত্তর খুলশীর (মুরগী ফার্ম সংলগ্ন এলাকা) ৩ নম্বর সড়কের ভেতরে, ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের চসিক প্রকল্প সংলগ্ন পাহাড়সমূহ।
জালালাবাদের আরেফীন নগরের পাহাড়টি কাটছে মো. আবু তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি। তিনি এই পাহাড় দখল করে গোপনে দীর্ঘদিন ধরে কেটে আসছেন এসব পাহাড়। মধ্যরাতে ও ভোরে এসব পাহাড় কাটা হয়। বায়েজিদের আরেফিন নগর ও সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের মাঝামাঝি এসব পাহাড়ের অবস্থান। অভিযোগ রয়েছে, বায়েজিদ থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য এসব পাহাড় দখল ও কাটার কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। এ কারণে স্থানীয়রা প্রতিবাদও করতে সাহস করেন না।
অন্যদিকে নগরের খুলশীর মুরগী ফার্ম এলাকার উত্তর খুলশী ৩ নম্বর সড়কের মাথায়ও পাহাড় কাটার তথ্য পাওয়া গেছে। এটি কাটার কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন চসিক নির্বাচনে এক কাউন্সিলরপ্রার্থী। তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এতে খুলশী থানার কতিপয় কয়েকজন সদস্য অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই এলাকার পারটেক্স এপার্টমেন্টের পরের একটি সড়কে বিদ্যমান একটি পাহাড় ইতোমধ্যে কেটে সাবাড় করা হয়েছে। প্রতি রাতে ট্রাকে ট্রাকে করে এই পাহাড়ের মাটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করেছেন স্থানীয়রা। ওই এলাকায় বসবাস করা সিএমপির এক কর্মকর্তা দৈনিক চট্টগ্রামকে এই বিষয়ে তথ্য দিলে সরেজমিনে গিয়ে পাহাড়টি কেটে সাবাড় করার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এছাড়াও নগরের এসএসএস খালেদ রোডের রীমা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে অবস্থিত পাহাড়টিও কর্তনের কবলে পড়েছে। রাতে রাতে পাহাড়টি কেটে সেখানে এপার্টমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা ছিল সংশ্লিষ্ট পাহাড়কাটা ব্যক্তিদের। যদিও গত ১৮ মে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রায় ২৮ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার দায়ে পাহাড় কাটার তত্বাবধানে থাকা সনজিত দত্ত ও ডা. দারদাউস শাহকে সোমবার (১ জুন) মোট ২৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগামি ৭ দিনের মধ্যে এই জরিমানার অর্থ পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এছাড়াও সেখানে কোনো ধরণের উন্নয়ন কাজ না করাও নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম নগরের সীতাকুণ্ড-আকবরশাহ থানার বর্ডার এলাকা শাপলা আবাসিক ও বিশ্ব কলোনী সংলগ্ন চসিক হাউজিং প্রকল্পের সন্নিকটের একাধিক পাহাড় কাটা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রচ্ছায়ায় রাতে রাতে এসব পাহাড় কেটে টিনের ঘর তুলে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের মাধ্যমে এসব পাহাড় কাটানো হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ওই নেতার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগে একাধিক মামলা থাকলেও অদৃশ্য কারণে তিনি প্রায় প্রতি রাতেই শ্রমিক দিয়ে এসব পাহাড় কাটানোর কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
এসব পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। পুরো পাহাড় একই দিনে কাটা হয়নি। তিন/চার দিন গ্যাপ রেখে গভীর রাতে কাটা হয়েছে। যাতে বুঝতে পারা না যায়। কর্তনকৃত পাহাড়সমূহের এলাকার স্থানীয়রা জানান, বন্ধের মধ্যে রাতের বেলা নিয়মিত কাটা হয়েছে পাহাড়। পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে কেটে রাতে রাতেই সেখানে টিনের ঘরও তৈরি করা হয়েছে যাতে বুঝা না যায়। তারা আরো জানান, যারা পাহাড় কাটে তারা প্রভাবশালী, খারাপ মানুষ। আবার তারাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচন করে। পুলিশও তাদের সহযোগিতা করে। তাদের সাথে পুলিশের মোটা অংকের চুক্তি হলেই পড়ে এসব পাহাড় কাটা শুরু হয়। সেই জন্য কেউ এতে প্রতিবাদ করার সাহস করে না।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ১৮ মে আমরা এসএস খালেদ রোডের গ্রীণল্যাজ ব্যাংক পাহাড়টি পরিদর্শনে গিয়ে পাহাড় কাটার প্রমাণ পায় পরিবেশ অধিদফতরের টিম। পাহাড়ের মোট ২৮ হাজার ঘনফুট কাটা হয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য এ পাহাড় কাটা হচ্ছিলো। আমরা এর সাথে সংশ্লিষ্টদের ২৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। তিনি বলেন, বায়েজিদ, উত্তর পাহাড়তলী, খুলশীতে পাহাড় কাটার তথ্য আমাদের জানা ছিল না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো আমরা।
ডিসি/এসআইকে/আইএস