বাঁশখালীতে মেছোবাঘ হত্যা করে আনন্দ-উল্লাস!

মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথরিয়া ইউনিয়নে একটি বন্য মেছোবাঘকে পিটিয়ে হত্যা করে আনন্দ-উল্লাস করেছে স্থানীয় যুবকেরা।  ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগমারা (টোনাইয়ার বাড়ি) নামক এলাকায় গত ৩ জুন (বুধবার) সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।  ঘটনার একদিন পর আজ বিষয়টি সবার নজরে আসলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।  এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে মেছোবাঘ প্রায় ৯ টির মতো ছাগল হত্যা করেছে।  লোকালয়ে ঢুকে বাড়ির মুরগি ও ছাগলের বাচ্চা খেয়ে ফেলে মেছাবাঘটি।  বুধবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় আলিকদার ভিটা কবরস্থানের একটি গাছের উপর বাঘটি অবস্থান করতে দেখে গাছের নিচে কুকুরদের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনে এলাকাবাসীরা এগিয়ে যায়।  পরে স্থানীয়রা বাঘটি গাছের উপরে বসে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে শত শত নারী-পুরুষ জুড়ো হতে থাকে ঐ গাছটির নীচে।  এক পর্যায়ে চতুর্দিক থেকে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ জুড়ো হয়ে যায়।  পরে বাঘটি গাছ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব বাগমারার ৪,৭ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাথায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী।  এ সময় কয়েকজন যুবক মিলে সেটিকে ধাওয়া করে ধরে এবং এলোপাথাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে।  পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক অতি উৎসাহী লোকজনকে শৃঙ্খলায় এনে মেছোবাঘটি হত্যা করে।  পরে এদিন রাতে বাঘটিকে তারা কাঁধে তুলে আনন্দ-উল্লাস করে।  সে সময় মোবাইলে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শেয়ার করে।  তারা বাঘটিকে পার্শ্ববর্তী খোলা জায়গায় গর্ত করে রাতেই মাটিচাপা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
কাথরিয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রমিজ আহমদ জানান, বিগত ১ মাস যাবৎ আমাদের গ্রামে প্রায় ৯ টির মতো ছাগলকে মেরে ফেলেছে বাঘটি।  ঘটনার একদিন আগে মঙ্গলবার (২ জুন) স্থানীয় বদি আহমদের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর (৩৫) কে আক্রমণ করে।  এতে জাহাঙ্গীরের পায়ে বাঘটির নখের আঁচড় লাগে।  ঘটনার দিন বুধবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে স্থানীয় আলিকদার ভিটা কবরস্থানের একটি গাছের উপর বাঘটি অবস্থান করতে দেখে স্থানীয়রা জড়ো হয় এবং এক পর্যায়ে বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে জলদী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জান শেখ আজ শুক্রবার (৫ জুন) দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, তারা বাঘটিকে হত্যা করে আনন্দ-উল্লাস করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি শেয়ার করেছে।  গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই আমরা ঢাকাস্থ ঊধ্বর্তন কর্তৃপকে বিষয়টি অবহিত করেছি।  বনবিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম।  তারা মেছোবাঘটি গর্ত থেকে তুলে উচ্চতা এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।  তিনি আরো বলেন, মেছো বাঘ মূলত এক ধরণের বিড়াল।  প্রাণীটি মানুষকে আক্রমণ করে না। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীটির বিচরণ রয়েছে।  তবে জলাভূমি রয়েছে এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়।  মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি খায়।  তবে কখনো কখনো হাঁস-মুরগিও ধরতে পারে।  জনবসতি স্থাপন, বন ও জলাভূমি ধ্বংস, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে মেছো বাঘকে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে আইইউসিএন।  তাছাড়া বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রজাতি সংরক্ষিত।  তাই এই প্রাণীটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’।  যে বা যারা বাঘটিকে হত্যা করে আনন্দ-উল্লাস করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বনবিভাগের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি