মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
গত ১ জুন দলবল নিয়ে নগরীর খুলশীর জালালাবাদস্থ গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটিতে একটি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে।  আজ মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব এস এম জমির উদ্দিন।  গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নগরীতে বিলবোর্ড ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত ছিলেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। সংবাদ সম্মেলনের জন্য তৈরি ব্যানারে মহিউদ্দিন বাচ্চু ও তার সন্ত্রাসীদের দ্বারা গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটিতে প্লট দখল, প্লট মালিকদের উচ্ছেদের চেষ্টা, দফায় দফায় হামলা, হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা হুমকিসহ বিভিন্ন অপতৎপরতার অভিযোগ আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জমির উদ্দিন বলেন, ‌‘গত ১ জুন রাতে মহিউদ্দিন বাচ্চু তার লোকবল নিয়ে সোসাইটির কেয়ারটেকারকে মারধর করে তার থাকার ঘর ভাঙচুর করেন।  পরদিন সকাল ১১ টায় মহিউদ্দিন বাচ্চু তার লোকবলসহ গিয়ে ‘এই জায়গার মালিক বায়না সূত্রে মহিউদ্দিন বাচ্চু’ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন’।
পরবর্তীতে কি মূলে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে জিজ্ঞেস করলে মহিউদ্দিন বাচ্চু ও তার লোকজন কেয়ারটেকারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায় বলে জমির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।  জমির উদ্দিন বলেন, এর আগে গত ৮ এপ্রিল জমির বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন মহিউদ্দিন বাচ্চু।  এছাড়া প্রতিনিয়ত কেয়ারটেকারকে গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়।  তিনি বলেন, ‌‘আমি ২০০০ সালে খুলশী মৌজার আর.এস ৫৫৩ দাগের সামিল পি.এস ১৮০ দাগেরসহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দাগাদির কমবেশি ২০ একর সম্পত্তি ক্রয় করি।  পরে রাস্তাঘাট ও নালা নর্দমা নির্মাণ করে খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটিটি প্রতিষ্ঠা করি।  পরবর্তীতে কিছু বিক্রি করে কিছু জমি নিজের জন্য রাখি।  কিন্তু সম্প্রতি মহিউদ্দিন বাচ্চু সে জায়গা দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন’।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানাধীন ওয়ার্লেস মুরগী ফার্ম এলাকার জালালাবাদ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির পাশেই গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটিটি অবস্থিত।  সোসাইটির বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইরশাদ আলী ভূঁইয়া দৈনিক চট্টগ্রামকে মোবাইল ফোনে বলেন, ৫৫৩ দাগের যে জমিটি নিয়ে সমস্যা সেটি মূলত আমাদের হাউজিং এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. এস এম জমির উদ্দিন ও মো. আলমগীর নামের এক ব্যক্তির যৌথ মালিকানাধীন।  সেই জমিটির অংশীদার আলমগীর সাহেব থেকে নাকি মহিউদ্দিন বাচ্চু সাহেব কিনেছেন। ঝামেলা শুরু হয় আরেক অংশীদার এস এম জমির উদ্দিনের অংশ নিয়ে।  জমির উদ্দিন সাহেবের উপস্থিতিতে মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ আরো অনেকে ওই জায়গা বুঝে নিয়েছেন বাচ্চু সাহেব।  এতে জমির সাহেবও সম্মতি দিয়েছেন।  কিন্তু কি কারণে আবার ঝামেলা শুরু হলো বুঝতে পারছি না।  তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ থাকায় আমরা এই বিষয়ে কিছু করতে পারছি না।  উনি বসলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
জায়গাটির কেয়ারটেকাররা জানান, ৪০-৫০ জন যুবক তাদেরকে জায়গা থেকে সরে যেতে বলেন।  তারা নিজেরা প্রাণ ভয়ে রয়েছেন বলেও জানান।  স্থানীয়রা জানান, গত ১ জুন ওই জায়গায় নিজের লোকজন নিয়ে সাইন বোর্ড স্থাপন করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু।  পরে ৩ জুন (বুধবার) বিকেলে পুনরায় লোকজন নিয়ে এসে নতুন করে স্থাপনা তৈরির নির্দেশ দিয়ে যান তিনি।
তবে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুর নামে কোনো দলিলের খোঁজ মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুকে মুঠোফোন কল দেয়া হলে তিনি জানান, তিনি অনেকগুলি জায়গা ক্রয় করেছেন বিভিন্ন এলাকায়।  তবে জমির সাহেবের কোনো জায়গায় জোর করে তিনি সাইনবোর্ড লাগাননি।  জনৈক আলমগীর থেকে উল্লেখিত জায়গা ক্রয় করে নিয়েছেন দাবি করে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, জমির সাহেব নিজে থেকে জায়গাটি দেখিয়ে দিয়েছেন৷
মহিউদ্দিন বাচ্চুর বক্তব্যের জবাবে অভিযোগকারী জমির উদ্দিন বলেন, লালখান বাজারের একটি অফিসে ডেকে জোর করে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।  এসময় মহিউদ্দিন বাচ্চু কোনো দলিল প্রদর্শন না করে উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তিনি স্থান ত্যাগ করেন।

ডিসি/এসআইকে/আইএস