‘রইন্যার লাশ যদি না ফেলি আমার নাম ফয়সাল ইকবাল না’

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে হত্যার (লাশ ফেলার) হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে।  ডা. ফয়সাল বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদকও।  নগরের হালিশহরে কয়েকজন যুবকের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’ নিয়ে কথা বলতে গিয়েই এর প্রধান উদ্যোক্তা মো. সাজ্জাত হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি এই হুমকি দেন।  আজ সোমবার (২২ জুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সাজ্জাত হোসেন নিজেই।
এদিকে সাজ্জাত হোসেনের সঙ্গে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর এই কথোপকথন ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  এক মিনিট ৮ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপের শুরুতে ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’র উদ্যোক্তাদের হেয়প্রতিপন্ন করে ডা. ফয়সাল বলেন, ‘নাই ডাক্তার, নাই, কিছু নাই। ভংচং করার দরকারটা কি?’ এ সময় করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’র উদ্যোক্তাদের ‘চোর-ডাকাত’ উল্লেখ করে গালাগালি করতেও শোনা যায় এই আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকে।  পরে তিনি বলেন, ‘রোগীর যেটার অভাব, আইসিইউ, ন্যাজাল ক্যানোলা, ওখানে কি আছে?  সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে?  নাকি আর কি আছে?’
সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মানুষ শোয়ায় রাখার জন্য একটা দরকার, মেয়রেরটা যথেষ্ট, ওইখানে ডাক্তাররাও আছে।  আর ওইখানে দুনিয়ার চোর-ডাকাত সবগুলোরে নিছ, এখানে আমরা যাব না?’  একপর্যায়ে ডা. ফয়সাল বলে উঠলেন, ‘চোর-ডাকাত নিয়ে তুমি ইয়া করো, হ্যাঁ! ওইখানে আবার তোমরা পিকনিক পার্টি কর! মানুষের টাকা-চাঁদা তুলে’।
‘পিকনিক পার্টি করি মানে?’ সাজ্জাত হোসেন এমন প্রশ্ন করলে ফয়সাল ইকবাল প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।  কথোপকথনের একপর্যায়ে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ডা. ফয়সাল ইকবালকে বলতে শোনা যায়, ‘চোর-ডাকাতের সঙ্গে থেকে লাভ নেই।  রইন্যার (নুরুল আজিম রনি) মতো চোর-ডাকাতের সঙ্গে কি? দেশ একটু সুস্থ হোক।  ওর লাশ দেখা যাবে।  ওর লাশ যদি না ফেলি, আমার নাম ফয়সাল ইকবাল না’।
মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নৈরাজ্য নিয়ে মানববন্ধন থেকে ডা. ফয়সাল ইকবালসহ কয়েকজনকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছিলো।  ঘটনাক্রমে আমিও সেই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলাম।  এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে মুঠোফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন ডা. ফয়সাল ইকবাল। আজ (সোমবার) সকালে ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে এই হুমকি দেন’।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি অভিযোগ করে বলেন, ‘করোনা মহামারির এই সময়ে ডা. ফয়সাল ইকবাল সিন্ডিকেট করে পুরো চিকিৎসা সেবাকে জিম্মি করে রেখেছিল।  আমরা তার প্রতিবাদ জানিয়েছি বলেই আমাকে মেরে ফেলতে চায়।  আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত নই’।
তবে বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দাবি, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এই কারসাজি করা হয়েছে।  তার গলার স্বর নকল করে এটি সাজানো হয়েছে।  তিনি বলেন, ‘টেলিফোনের কণ্ঠের সঙ্গে আমার কথার কোনো মিল নেই।  সাজ্জাতের সঙ্গে আমার এ ধরনের কোনো কথা হয়নি’।
এদিকে, রনি জানান, তিনি রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রনি চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।  অপরদিকে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য নুরুল আজিম রনিকেও দলীয় পদ ছাড়তে হয়েছিল।  সামাজিক কাজসহ নানা কর্মকাণ্ডের কারণে এখনও ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে রনির।  আর নগর আওয়ামী লীগের চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদকের পাশাপাশি চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. ফয়সাল ইকবাল।

ডিসি/এসআইকে/এসএজে