একই মসজিদের দুইবার উদ্বোধন : সীতাকুণ্ডে এমপি’র নাম ফলক ভাঙচুর, নেপথ্যে কৃতিত্ব নেয়ার রাজনীতি!

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলমের উদ্বোধনের মাত্র দু’দিন পরেই গভীর রাতে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ফলক ভেঙ্গে দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা।  এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপি দিদারুল আলম।  খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ ঘটনার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।  তবে, সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মডেল মসজিদ নির্মাণের স্থানসহ প্রাথমিক সব কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন।  তিনি গত মার্চ মাসে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তুর ও নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন যা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।  কিন্তু অনেকটা হঠাৎ করেই নতুন করে একই মসজিদের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন সংসদ সদস্য দিদারুল আলম।  মূলত এতে সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ সংসদ সদস্যের ওই নাম ফলম ভেঙে ফেলে। সংসদ সদস্য দিদারুল আলমও এই ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনের দিকে আঙুল তুলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জুন (মঙ্গলবার) দুপুরে উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকায় সাদেক মস্তান (রা.) উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন এমপি দিদারুল আলম।  কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র দু’দিন পরেই বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাতের আঁধারে দুষ্কৃতিকারীরা মসজিদের নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধর করে উদ্বোধন ফলকটি ভাঙ্গার চেষ্টা চালায়।  এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে সীতাকুণ্ড থানার এসআই মো. মামুন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়।  এর প্রায় দু’ঘন্টা পর গভীর রাতে দুষ্কৃতিকারীরা উদ্বোধন ফলকটি ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায়।

একই মসজিদের উদ্বোধন করেন এস এম আল মামুন এবং সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। মামুনের উদ্বোধনের সংবাদটি ২০ মার্চ দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র দৈনিক চট্টগ্রামকে জানিয়েছে, সংসদ সদস্য দিদারুল আলম সরকারি অর্থায়নে যে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করে গত ২৩ জুন (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সেটি এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আলম মামুন মার্চের ১৯ তারিখে উদ্বোধন করেছিলেন যা সে সময় পত্র-পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। উদ্বোধনের পর মসজিদের সার্বিক নির্মাণ কাজ পরিদর্শনও করেন মামুন।  মূলত মসজিদ নির্মাণ কাজের কৃতিত্ব নেয়ার রাজনীতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনের অনুসারিদের দাবি, এই মসজিদের স্থান নির্বাচন, জায়গার মালিকানা নিশ্চিতকরণসহ যাবতীয় কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন।  সবকিছু সম্পন্ন শেষে সম্প্রতি তিনি এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তুরও স্থাপন করে উদ্বোধন করেন।  তিনি বর্তমানে অসুস্থ আছেন।  তার অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণের কৃতিত্ব নেয়ার অপচেষ্টা করেছেন সংসদ সদস্য দিদার।  এ জন্য তিনি ইতোমধ্যে উদ্বোধন হওয়া মসজিদের নির্মাণ কাজের পুনরায় উদ্বোধন করেন যা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ।
যেদিন সংসদ সদস্য মসজিদের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন সেদিনই তাওসিফুর রহমান মাহিম নামের এক ছাত্রলীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যানের উদ্বোধনের ছবি ও উদ্বোধনের সংবাদের পত্রিকার কাটিং সংযুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।  তিনি সেখানে উল্লেখ করেন- যে মসজিদের জায়গা থেকে শুরু করে সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, যে মসজিদের নির্মাণ কাজ ও ভিত্তিপ্রস্তুর ইতোমধ্যে মামুন ভাই উদ্বোধন করেছেন, সেই মসজিদের নির্মাণ কাজ ও ভিত্তিপ্রস্তুর আবার কিভাবে উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য?  উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন ভাইয়ের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তা আবার উদ্বোধনের এমন নোংরা রাজনীতি সীতাকুণ্ডবাসী কখনোই গ্রহণ করবে না।  যদিও ওই স্ট্যাটাসটি পরে সরিয়ে ফেলা হয়।

গত মার্চে মডেল মসজিদের উদ্বোধন শেষে পরিদর্শন করেন এস এম আল মামুন।

এদিকে মসজিদের উদ্বোধন ফলক ভাঙার ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন সংসদ সদস্য দিদারুল আলম।  তিনি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা আওয়ামী সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।  প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে গত মঙ্গলবার ফকিরহাট এলাকায় এ মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।  কিন্তু সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে দুষ্কৃতিকারীর দল রাতের আঁধারে উদ্বোধন ফলক ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায়।  শুধু তাই নয়; আল্লাহর ঘর মসজিদেও হামলা চালায় তারা।  হামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ওই মসজিদের ঠিকাদারদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংসদ সদস্য দিদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীরা এ মসজিদের ঠিকাদারের কাছে ৬ শতাংশ চাঁদা দাবি করে।  প্রত্যাশিত চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধের হুমকি দেয়।  এরপরই পরিকল্পিতভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারিরা মসজিদের নাম ফলকটি ভাঙচুর করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় জানান, মসজিদের উদ্বোধন ফলক রাতের আঁধারে ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।  এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভেঙ্গে ফেলা এমপির নামাঙ্কিত উদ্বোধন ফলক।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুষ্কৃতিকারীদের হামলার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে এস আই মামুনকে পাঠালে দুষ্কৃতিকারীরা তার আগেই পালিয়ে যায়।  কিন্তু একঘন্টা পর এসআই মামুন চলে আসলে দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় গিয়ে উদ্বোধন ফলকটি ভেঙ্গে দেয়।  এ ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

ডিসি/এসআইকে/সিসি