এক গরুতে তিনবার খাজনা দিতে হয়, ফলে গরুর দাম বেড়ে যায়

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
পশুর হাটে সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে বেশি খাজনা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।  সংগঠনটি অভিযোগ করে, জননিরাপত্তার নামে কোরবানির পশুরহাটে ইজারাদারদের অবৈধ অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  ভোক্তারা অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান পায় না।  সংগঠনটির মহাসচিব রবিউল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘একটি গরু সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসতে তিনবার হাটে বিক্রি হয়।  তিনবারই খাজনা দিতে হয়।  এতে গরুর দাম বেড়ে যায়।  এছাড়া নির্ধারিত খাজনার বেশি টাকা নেয় ইজারাদার।  আছে পথের মাস্তানেরা।  এটা বন্ধ করতে হবে।  ইজারাদারদের অসাধু কাযক্রম বন্ধ করে সিটি কর্পোরেশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও স্থানীয় সরকার হাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারে’।
শনিবার (১১ জুলাই) বেলা ১২ টার দিকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে সংগঠনটি।  রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গরুর হাটে ইজারাদারদের নিজস্ব আইনে চলছে।  মাথায় বাড়ি দিয়ে টাকা আদায় করে।  এই বিষয়ে গরু ব্যবসায়ীদের শত শত অভিযোগ রয়েছে সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে।  তবে কোনো কাজ হয়নি।  একটা অভিযোগেরও সমাধান হয়নি’।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইজারাদারের অবৈধ অর্থের নিরাপত্তা দেয়
কোরবানির পশুর হাটগুলো মাত্র তিন দিনের জন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই তিন দিনে জননিরাপত্তার নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গরুর হাটের ইজারাদারের অবৈধ অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।  অত্যাচারের শিকার হওয়া, অতিরিক্ত খাজনা দিয়েও বিক্রেতারা বিচারের আসা করেন না।  কারণ বিচারের দীর্ঘসূত্রতা।  ইজারাদারকে জবাবদিহির মধ্যে আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মোবাইলকোর্টকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।  গরুর হাটের ইজারাদারদের জবাবদিহি করতে পারে একমাত্র সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ।  টাকার বিনিময় হোক বা অন্য কিছুর বিনিময় হোক, গত ৫০ বছরেও একটি গরুর হাটের ইজারাদারকে জবাবদিহিতায় আনা হয়নি।  ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের অসহযোগিতায় ও গরুর হাটের ইজারাদারদের অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের জন্য ৪৫ বছরের ইতিহাসে কেবল গত রমজানে মাংসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি’।
‘গরু পাচার করে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় ভারত ও মিয়ানমার’
বাংলাদেশে গরু পাচার করে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার।  এই গরু পাচার বন্ধ হলেই দেশের কৃষকরা পশু উৎপাদনে আগ্রহী হবেন উল্লেখ করে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দেশীয় পশু পালনের উন্নয়নের স্বার্থে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ ও মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে।  ভারত ও মিয়ানমার গরু পাচার করে প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।  ১০ ও ২০ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ দিলে দেশের কৃষকরাই চরাঞ্চলে পশু পালন করে আমাদের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি করে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে’।
তিনি বলেন, ‘ভারত ও মিয়ানমারের পশু পাচার বন্ধ না হলে দেশীয় পশু পালন উন্নয়ন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যাবে না।  সরকার, শিল্পপতি ব্যবসায়ী, সমাজের প্রতিষ্ঠিতরা জাকাতের অর্থ থেকে গরিব, কৃষক, বিধবা, বেকার যুব সমাজের মাঝে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার বাচ্চা বিতরণ, পশু পালনে উৎসাহিত করতে পারেন।  তাহলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে আমরা ৩০০ টাকা কেজিতে মাংস খাবো।  ইতোমধ্যে আমাদের সেনাবাহিনী স্বর্ণচরে পশু পালন প্রকল্প শুরু করেছে’।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘চামড়া শিল্প উন্নয়ন ও রফতানির প্রধান প্রতিবন্ধকতা বর্জ্য ও পানি শোধনাগার সিইটিপি পরিপূর্ণ করতে হবে।  রফতানি সচল না হলে সরকারের শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে চামড়া শিল্পনগরী উন্নয়নের সফলতা আমরা ভোগ করতে পারবো না’।  কোরবানির কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাংস কাটা ও চামড়া সংগ্রহ বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ