কক্সবাজারে ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় পিটিয়ে হত্যা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বিপদে প্রতিবেশিকে টাকা ধার দিয়ে সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় খুন হলেন শ্রমজীবী এক নারী।  টাকা ধার নেয়া পরিবারের সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে ওই নারীকে।  গতকাল শুক্রবার (১০ জুলাই) কক্সবাজারে দিবাগত রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ওই নারীকে পিটিয়ে আহত করা হয়।  পরে শনিবার (১১ জুলাই) ভোরে গুরুতর অবস্থায় ওই নারীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  সেখানে তার মৃত্যু হয়।  কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ কলাতলীর বড়মিয়া পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কুলসুমা বেগম (৪০) কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কলাতলীর বড়মিয়া পাড়ার জোড়া হাম্বা এলাকার মৃত নুরুল আবছারের স্ত্রী।  তিনি তিন ছেলে এক মেয়ের জননী ছিলেন।
তার বড় ছেলে জাহেদুল ইসলাম সুমন (২৩) বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ।  পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের নিয়ে কলাতলীর বড়মিয়া পাড়ার জোড়া হাম্বা এলাকায় একটি জমির পাহারাদার হিসেবে বাস করছিলেন মা।  আমরা মাছ শিকার করি।  মা বাসাবাড়িতে কাজসহ শ্রম বিক্রি করে সংসার চালাতেন।  সেখানে বাস করতে গিয়ে স্থানীয় রকিম আলীর পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয় আমাদের।  পরিচয়ের সূত্রে মাস তিনেক আগে বিপদের কথা বলে মায়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার চান প্রতিবেশী রকিম আলী।  না থাকলে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে হলেও দিতে বলেন।  প্রতিবেশীর বিপদ দেখে এনজিও থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ এবং নিজের কানের দুল বন্ধক দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা এনে মোট ২০ হাজার টাকা ধার দেন রকিম আলীকে।  কথা ছিল কিস্তি ও বন্ধকের সুদ রকিম আলী চালাবেন।  কিন্তু ধার পাওয়ার পর রকিমদের চরিত্র পাল্টে যায়।  তারা কিস্তিও চালান না; টাকাও শোধ দেন না।
সুমন আরও বলেন, এ নিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের মনোমালিন্য চলছিল।  শুক্রবার (১০ জুলাই) বিকেলে রকিম আলীর স্ত্রী তৈয়বা বেগমকে বাড়ির কাছে পেয়ে টাকা খোঁজার পর মায়ের সঙ্গে বাগবিতণ্ড হয়।  যা দুজনের মাঝে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়।  এর জেরে রকিম আলীর ছেলে হাবিব উল্লাহ ও আবদুল্লাহ এসে আমাকে আমাকে মারধর করেন।  রাতে সবাই যার যার মতো ঘুমিয়ে পড়ি।  হঠাৎ মায়ের মোবাইলে একটা কল আসে।  মা রকিম আলীর বাসায় যাচ্ছে বলে বেরিয়ে যান।  এরপর সারারাত মাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।  ভোর ৬ টার দিকে রকিম আলীর বড় মেয়ে শাহেনা ফোন করে বলেন, আমার মা সদর হাসপাতালে।  দ্রুত সেখানে এসে দেখি মায়ের মরদেহ পড়ে আছে।  তার সারা শরীর এবং মুখে আঘাতের চিহ্ন।  খবর পেয়েছি রকিম আলী আমার মাকে হাসপাতালে আনেন।  শরীরে জখম দেখে হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ তথ্য দেয়ার জন্য রকিম আলীকে কক্ষে যেতে বললে রকিম আলী কৌশলে পালিয়ে যান।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. খায়রুজ্জামান বলেন, বিষয়টি সদর থানার ওসিকে অবহিত করেছে নিহতের পরিবার।  ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।  লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিসি/এসআইকে/এফআর