সীতাকুণ্ডে অবৈধ খাদ্যপণ্যের কারখানা সিলগালা, মামলা দায়ের

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নানান উপাদানে মিশ্রিত খাদ্যপণ্য, পানি ও বিএসটিআই এর লেবেল অবৈধভাবে যুক্ত করে বাজারজাত করার অভিযোগে একটি কারখানা সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।  বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর লেবেল লাগিয়ে খাবার পানিসহ বিভিন্ন পণ্যের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল নুরুল নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।  মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন রায় ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালনা করেন।  তবে অভিযানের সময় কারখানা মালিক মো. নুরুল ইসলাম পালিয়ে যান।
এর আগেও একই কারখানায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায়ের ঘটনা ঘটলেও সুধরাননি ওই ব্যবসায়ী।  বরং অবৈধ ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন বহুগুণে।
অভিযানের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলার এনএসআই কর্মকর্তা এবং সীতাকুণ্ড মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম।
জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলার মাদামবিবিরহাট নেভিরোড খাদেমপাড়া এলাকায় শাকির মঞ্জিলের নিচ তলার একাংশ ও উপরের তলায় আর ও ড্রিংকিং ওয়াটার, ফাহিম চা পাতা, আরএসএম ডিটারজেন্ট পাউডার ও টু স্টার শাপলা মার্কা কালো দাঁতের মাজন তৈরি করে বিএসটিআই এর লেবেল অবৈধভাবে সংযুক্ত করে বাজারজাত করে আসছেন।  ভবনের বাকি অংশে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম।  কারখানার নিজস্ব কোনো কারখানা না থাকলেও একই বিল্ডিংয়ে এতোগুলো অবৈধ ও অনৈতিক ব্যবসার বিস্তারিত দেখে ভ্রাম্যমাণ আদালতও রীতিমতো হতভম্ব।  এর আগেও সীতাকুণ্ডের প্রাক্তন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দুইবার এই পানির কারখানায় অভিযান পরিচালনা ও জরিমানা করেন।  কিন্তু, আবারো বড় আকারে শুরু করেন এই ব্যবসা।
জানা গেছে, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে এই অবৈধ ব্যবসার আস্তানাটি।  তারা শুরু করেন তদন্ত।  এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।  অভিযানকালে কারখানা মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।  পরে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় সেখানে পাওয়া অবৈধ পণ্যের বিভিন্ন লেবেল, রাসায়নিক পদার্থ, কয়েকশত পানির পাত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়।  এছাড়াও কারখানাটি সিলগালা করে মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগে সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন রায় বলেন, ‘এর আগেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কারখানায় ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।  এখন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে আমি অভিযান পরিচালনা করেছি।  দীর্ঘসময় অভিযানে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আমরা জব্দকৃত অবৈধ ব্যবসার বিভিন্ন পণ্য আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছি।  কারখানার মালিক পালিয়ে যাওয়ায় আমরা কারখানার কক্ষগুলো সিলগালা করেছি এবং মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার দায়ে নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে’।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্তারা এখান থেকে মাসোহারা পেতেন। সে কারণে এই অপরাধী আরো বেপোরোয়া ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয় পরিচয়ে দাঁপিয়ে বেড়াতেন। তার এসব অবৈধ কাজে কেউ বাঁধা দিতে বা কিছু বললে সমস্যা করতেন। এ জন্য কেউ কিছু বলে না।

ডিসি/এসআইকে/এমএমইউ