উত্তর কাট্টলীতে আ’লীগ নেতার উপর অতর্কিত হামলা, ঝুঁকিতে দুই চোখ

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
একাধিকবার ফেসবুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট করে কুৎসা রটানোর প্রতিবাদ করার জেরে আওয়ামী লীগ নেতার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করার খবর পাওয়া গেছে।  চট্টগ্রাম নগরের ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের জহুর আহমদ চৌধুরী বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।  হামলার শিকার মো. সাইদুর রহমান পুতুল চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর ভাতিজা বলে জানা গেছে।  ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলার ফলে তার শরীরে মারাত্মক জখমসহ দুইচোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  এই ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় শনিবার লিখিত অভিযোগ করার পর থেকেই হামলাকারীরা পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর কাট্টলীর জহুর আহমদ চৌধুরী বাড়ির মৃত এস্কান্দরের ছেলে যথাক্রমে খালেদুর রহমান টিটু (৩৬), তার ছেলে মো. খালেদ ইবনে রাকিব (২০) ও মো. সাকিব (১৮) দীর্ঘদিন ধরে সদ্য সাবেক প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং প্রকাশ্যে স্থানীয় আড্ডায় নানান বিতর্কিত মন্তব্য করে আসছিল।  এসব বিষয় নিয়ে প্রায়শ স্থানীয় আড্ডায় আলোচনার প্রেক্ষিতে এবং এসব আলোচনায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ হামলার শিকার স্থানীয় মৃত শহীদুল্লাহ চৌধুরীর (সাবেক মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর ভাই) ছেলে সাইদুর রহমান পুতুলের নাম উল্লেখ করে সমালোচনা করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছিল।  সর্বশেষ গতকাল শনিবার (৮ আগস্ট) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এসব বিষয় নিয়ে সামনাসামনি আবারো আলোচনা করে আসামিরা।  তখন সেখানে উপস্থিত সাইদুর রহমান পুতুলসহ আরো কয়েকজন মুরুব্বি এসব বিতর্কিত বিষয় এবং কাউন্সিলরসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধ করে।  কিন্তু আসামিরা সমালোচনার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে নানান কটু কথা বলতে শুরু করে।  এসময় স্থানীয় মুরুব্বিরাসহ উপস্থিত পুতুল প্রতিবাদ করে এবং এসব রাজনৈতিক গ্রুপিং ও বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা না বলতে অনুরোধ করে চলে যায়।  এরপর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সাইদুর রহমান পুতুল জহুর আহমদ চৌধুরী বাড়ির সামনের মাঠে অন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন।  এমন সময় পেছন দিক থেকে অতর্কিতভাবে আসামিরা পুতুলের উপর হামলা করে।  প্রথমে ধারালো ছুড়ি দিয়ে পুতুলের পেছনে আঘাত করা হয়।  এরপর হাতের সব আঙ্গুলে লাগানো লোহার ফ্রেম (হ্যান্ড হায়রণ মেটাল) যুক্ত হাত দিয়ে দুইচোখে ঘুঁষি মারতে থাকে।  এতে পুতুলের দুই চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  পেছনে ছুরির আঘাতে মারাত্মক জখম হয়।  এসময় প্রত্যক্ষদর্শীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর থেকেই হামলাকারিরা পলাতক রয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে আসামিদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
হামলায় গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন সাইদুর রহমান পুতুল দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, হামলাকারীরা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে এলাকার কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর বিরুদ্ধে নানান বিতর্কিত মন্তব্য করে আসছিল।  উনার সাথে থাকা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও একটি পক্ষের ইন্ধনে কুৎসা রটাচ্ছিল।  সর্বশেষ শনিবার (৮ আগস্ট) তারা আমাদের বাড়ির সামনে এসব বিতর্কিত মন্তব্য ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নানান কুৎসা ছড়ানোমূলক কথাবার্তা বলছিল।  তখন আমি সেখানে উপস্থিত থাকায় বিষয়গুলো আমার এবং স্থানীয় অনেকের কানে আসছিল।  আমরা ‍আমরা তাদের বলেছি- ‘তোমরা জহুর আহমদ চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা।  সবার একটা সম্মান আছে।  মানুষের নামে এভাবে কুৎসা রটালে আমাদেরই মানসম্মান যাবে।  এগুলো ভালো না’।  আমার সাথে অন্য মুরুব্বিরাও তাদের এই বিষয়ে বিতর্ক না ছড়াতে অনুরোধ করে।  এরপর আমি ও অন্যরা চলে যাই।  এর কিছুক্ষণ পর আমি আবার সড়কের পাশে আমাদের বাড়ির খোলা মাঠে দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন দিক থেকে টিটু, তার দুই ছেলে রাকিব ও সাকিব আমার উপর হামলা করে।  প্রথমে পেছনে ছুড়িজাতীয় কিছু দিয়ে আমাকে ঘাই মারে, পরে হাতের পাঁচ আঙ্গুলে ফিঙ্গার কাভার লোহা লাগিয়ে চোখে মারতে থাকে।  তখন স্থানীয়রা এসব দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাইনুর রহমান দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, শনিবার এই বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।  এর পরপরই আমরা আসামিদের গ্রেফতারে অপারেশন (অভিযান) চালিয়েছি।  তারা ঘটনার পর থেকেই পলাতক।  আজ (রবিবার ৯ আগস্ট) রাতে অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড হবে।  আসামিদের ধরতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।  আশা করছি দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতিবাদ ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবি

আহত পুতুলকে দেখতে যান ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ, ইকবাল চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

এদিকে, সাবেক মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর ভাতিজা উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান পুতুলের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ। সভাপতি সুলতান আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু সুফিয়ানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।  এছাড়াও হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে আহ্বায়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইকবাল চৌধুরী, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. গিয়াস উদ্দিন জুয়েলসহ কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

ডিসি/এসআইকে/আইএস