এক জয়নালের পরিবর্তে আরেক জয়নালকে হত্যা!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দুইজনের নামই জয়নাল।  একজন স্কুলছাত্র, অপরজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আর এবার সন্ত্রাসী জয়নালের কুর্কীতির খেসারত হিসেবে প্রাণ দিতে হলো স্কুলছাত্র জয়নালকে।  সন্ত্রাসী জয়নালকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশ তাদের ছেলেকে (স্কুলছাত্র জয়নাল) ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে বলে দাবি করেছে স্কুলছাত্র জয়নালের পরিবার।
স্কুলছাত্র জয়নাল নোয়াখালীর মাইজদী উপজেলার নুরুল ইসলামের ছেলে।  সে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের ভোকেশনাল অ্যান্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।  অপরদিকে, বখাটে জয়নাল নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদ পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে।
২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর শাহ আলমের রৌফাবাদ পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার বাসায় ঢুকে তাদের উপর হামলা চালায় বখাটে জয়নালসহ বেশ কয়েকজন।  এ ঘটনায় জয়নালকে দুই নম্বর আসামি করে সাতজনের নামে মামলা করেন শাহ আলম।
এদিকে, ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর স্কুলছাত্র জয়নালকে বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় বায়েজিদ থানা পুলিশ।  পরে তাকে নিয়ে বায়েজিদ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের সামনের মাঠে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যায় পুলিশ।  সেই অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জয়নালের মৃত্যু ও ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় এলজি, কিরিচ ও চারটি কার্তুজের খোসা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।  এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন বলেও দাবি করে পুলিশ।
অপরদিকে, স্কুলজয়নালের মৃত্যুর প্রায় ২৪ দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর শাহ আলমের দায়ের করা মামলায় আসল আসামি বখাটে জয়নালকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।  এরপর একই বছরের ১৫ অক্টোবর শুনানি শেষে চার্জশিট আমলে নিয়ে বখাটে জয়নালকে মৃত ধরে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।  এভাবেই চলছিল মামলার কার্যক্রম।
কিন্তু হঠাৎ চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দাখিল করেন আসামি বখাটে জয়নাল (পুলিশ যাকে মৃত দেখিয়েছে)।  এরপরই নতুন মোড় নেয় মামলাটি।  বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থী জয়নালকে মেরে বখাটে জয়নালকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য।  এ ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ থানার তৎকালীন এসআই দীপংকর চন্দ্র রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এ বিষয়ে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চট্টগ্রাম মহানগরের অতিরিক্ত পিপি আবিদ হোসেন বলেন, এ মামলায় আসামি জয়নালকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।  সেই পুলিশি তদন্তের ভিত্তিতে মামলা থেকে জয়নালকে অব্যাহতি দেয় আদালত।  কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই জয়নাল (পুলিশের ভাষ্যে মৃত) আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।  এ নিয়ে তিনবার তিনি হাজিরা দিয়েছেন।  তাহলে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’অন্য কারো মৃত্যু হয়েছে, তা তো পরিষ্কার।
তিনি বলেন, জয়নালকে আবার চার্জশিটভুক্ত করতে গত ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে আবেদন করেছেন বাদী শাহ আলম।  আগামি ৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।  সেদিন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।  একইসঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা খতিয়ে দেখতে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়া জয়নাল বেপরোয়া প্রকৃতির তরুণ ছিল দাবি করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে বরখাস্ত) এসআই দিপংকর চন্দ্র রায় বলেন, ভুল করে এক জয়নালের জায়গায় অন্য জয়নালকে বাদ দিয়েছি।  তবে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জয়নালও বেপরোয়া প্রকৃতির তরুণ ছিল।  তার বিরুদ্ধে দু-তিনটি মামলা রয়েছে।
জয়নালের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, রৌফাবাদ পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায় একটি পরিবারের উপর হামলার ঘটনা শুনেছি।  সেই ঘটনায় জয়নাল নামে একজনকে আসামি করে সাতজনের নামে মামলা করে ওই পরিবার।  কিন্তু ওই ঘটনার কিছুদিন পর গভীর রাতে পুলিশ আমার ছেলেকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।  এরপর তারা আমার সহজ-সরল ছেলেটিকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে মেরে ফেলে।  আর সেই মামলার আসামি বলে চালিয়ে দেয়।  এ ঘটনায় প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্টতা আছে।  আমরা গরিব মানুষ, তাই চুপ করে আছি।  বিচার আল্লাহ করবেন।

ডিসি/এসআইকে/এসএজে