চট্টগ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী বাদির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মিথ্যা অভিযোগ এনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকার নুরুল আবছার নামে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’।  আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ তদন্ত করে।  তদন্তে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নুরুল আবছারের অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।  পরে আদালত পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খারিজ করে দেন।
এবার মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করায় দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে বাদি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।  সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদি হয়ে মামলাটি করেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম (মামলা নম্বর ১২)।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন জানান, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মিথ্যা অভিযোগ এনে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন নুরুল আবছার।  তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।  পরে দুদক প্রধান কার্যালয়ের ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের একটি স্মারকমূলে মিথ্যা মামলার বাদি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৮ (গ) ধারায় মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হলে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
২০১৯ সালের ২৫ মার্চ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন নুরুল আবছার।  নুরুল আবছার নিজেকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন।  পরে মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার কারণে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়।  নুরুল আবছার পতেঙ্গা থানাধীন কোনার দোকান এলাকার বদিউল আলমের ছেলে বলে জানা গেছে।
নুরুল আবছারের দায়ের করা মামলায় পতেঙ্গা থানার তৎকালীন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) তরুণ কান্তি শর্মা, সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রণয় প্রকাশ, ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া (বর্তমানে পাঁচলাইশ থানার ওসি), এসআই আবদুল মোমিন, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহির কান্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।  একই মামলায় মো. ইলিয়াছ, মো. জসিম ও মো. নুরুল হুদা নামে আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘২০১৮ সালের ১ জুন বিকেলে নগরের পতেঙ্গা কাটগড় এলাকা থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা নুরুল আবছারকে তুলে ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়ার কাছে নিয়ে যান।  পরদিন দুপুর পর্যন্ত নুরুল আবছারকে ইয়াবা ব্যবসায়ী উল্লেখ করে আটক রেখে ৩০ লাখ টাকা দিতে চাপ দেন পুলিশ সদস্যরা।  টাকা না দিলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়।  পরে ১৫ লাখ টাকা তিনি এসআই কামরুজ্জামানের হাতে দেন।  বাকি ১৫ লাখ টাকা না দেওয়ার তাকে বিদেশি মদ উদ্ধারের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়’।
দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, আদালত অভিযোগটি দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন।  তদন্ত শেষে অভিযোগের সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।  আদালতও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খারিজ করে দেন।
পরে দুদক প্রধান কার্যালয়ের ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের একটি স্মারকমূলে মিথ্যা মামলার বাদি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৮ (গ) ধারায় মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হয় এবং দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নুরুল আবছার যে অভিযোগ করেছিলেন তা সত্য নয়।  সার্বিক তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণে অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।  নুরুল আবছার অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদেরকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/এসএজে