১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চসিক প্রশাসকের প্রতিনিধি পরিচয়ে কাউন্সিলরের চেয়ারে, নিলেন সংবর্ধনাও!

রোকসানা রুনা, নগর প্রতিবেদক >>>
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে পাওয়া গেলো ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর!  চসিকের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন তার প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের চেয়ারে বসতে বলেছেন বলেও প্রচার করেন।  এভাবেই গত কয়েকদিন ধরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে বেশ উৎসবের আমেজে কাউন্সিলরের চেয়ারে বসে নিজেকে চসিক প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে ইয়াকুব আলী মজুমদার নামের এক ব্যক্তিকে।  ওয়ার্ড বা থানা আওয়ামী লীগের কেউ না হলেও বেশ বীরদর্পে তিনি নিয়েছেন সংবর্ধনাও।  যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ- এই ইয়াকুব আলী মজুমদার আওয়ামী লীগের কেউ না হলেও তিনি বিএনপির অন্যতম আর্থিক যোগানদাতা।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে কেউ কোনো ধরণের অনুমতি ছাড়াই একজন জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।  অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি আইনী পদক্ষেপ।  এতে করে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ সাধারণ মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করা হচ্ছে বলেও মনে করেন স্থানীয়রা। 
চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের শূন্য পদে কাউকে সমন্বয়ক বা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।  কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নগরের মাদারবাড়ি, শুলকবহরসহ বেশকিছু ওয়ার্ডে অনেকটাই আচমকা নির্বাচিত কাউন্সিলরের চেয়ারে বসে আলোচনায় আসেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।  চসিক প্রশাসক তাদেরকে কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর/প্রশাসকের প্রতিনিধি/সহায়ক কাউন্সিলর/চসিকের প্রতিনিধি পরিচয়ে বসতে বলেছেন বলেও তারা সাংবাদিকদের জানান।
এই প্রেক্ষিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান।  এতে উল্লেখ করা হয়, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে শূন্য কাউন্সিলর পদে সমন্বয়ক বা প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।  সংশ্লিষ্টদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়ে সুজন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, অন্যথায় আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
কিন্তু চসিক প্রশাসকের সেই হুঁশিয়ারিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাউন্সিলর কার্যালয়ে কাউন্সিলরের চেয়ারে বসেছেন ইয়াকুব আলী মজুমদার নামের ওই ব্যক্তি।  শুধু তাই নয়, শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাউন্সিলর কার্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ইয়াকুব আলী মজুমদার।  রবিবারও (২০ সেপ্টেম্বর) সেই সংবর্ধনার রেশ চলে ফুল/শুভেচ্ছা গ্রহণের মাধ্যমে।  এসময় কাউন্সিলরের চেয়ারে বসে বক্তৃতা দিতেও দেখা যায় তাকে।  সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজেকে সিটি কর্পোরেশন থেকে (কখনো কখনো প্রশাসক কর্তৃক নিযুক্ত বলেও জানান) নবনিযুক্ত সহায়ক হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয় নগরজুড়ে।
এই বিষয়ে জানতে ইয়াকুব আলী মজুমদারকে দৈনিক চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি নিজেকে চসিক প্রশাসক কর্তৃক নিযুক্ত প্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিলরের কাজগুলো সামলাচ্ছেন বলে জানান।  দায়িত্ব পাওয়ার কোনো চিঠি পেয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আপনি কষ্ট করে কাউন্সিলর কার্যালয়ে আসেন এক কাপ চা খেয়ে যান।  ‌আপনি কিভাবে কাউন্সিলরের চেয়ারে বসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান- আপনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ভাইয়ের সাথে কথা বলেন।  তিনিই এটা বলতে পারবেন।  তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা পালন করছি।
১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মালিক দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ‘আমরা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম।  তিনি আমাদের জানিয়েছেন চসিক থেকে কোনো ওয়ার্ডের জন্য সমন্বয়ক নিয়োগ দেয়া হয়নি।  হঠাৎ করে নিজেকে ওয়ার্ডে চসিক প্রশাসকের ‌‘প্রতিনিধি’ পরিচয় দিয়ে একটি আইনী চেয়ারে বেআইনীভাবে কিভাবে বসলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।  এ ধরণের গর্হিত বেআইনি কাজ করার সাহস বিএনপির এই অর্থদাতা (ইয়াকুব মজুমদার) কিভাবে পেলেন তা আমরা বুঝতে পারছি না।  কার মদদে তিনি এই অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তা সকলেরই প্রশ্ন।  আমরা খোরশেদ ভাইকে (চসিক প্রশাসক) বিষয়টি জানানোর পর তিনি বলেছেন লাথি দিয়ে তাকে ওয়ার্ড অফিস থেকে বের করতে’।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন হিরণ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন- কারো ইশারা ছাড়াতো এমন বেআইনী এবং গর্হিত কাজ কেউ করার সাহস পাবে না।  আমরা আগেও কয়েকটি ওয়ার্ডে এমনটা দেখেছি।  চসিক প্রশাসক ও চসিকের পক্ষ থেকে পরিস্কারভাবে জানানোর পরেও কিভাবে একজন ব্যক্তি কাউন্সিলরের মতো একটি নির্বাচিত পদে বসতে পারেন?  তিনি বিএনপি-জামায়াতের একজন অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত।  এই বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়া উচিত, না হলে আইনের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা থাকবে না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, যদি কেউ এমন বেআইনি কাজ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  আমি প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি।  তিনি কাউকে সেখানে দায়িত্ব দেননি বলে জানিয়েছেন।  আমরা বিষয়টি দেখছি।
জানতে চাইলে চসিকের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে কিংবা আমি এমন কোনো নির্দেশনা দেইনি।  শুধু ১৩ নম্বর ওয়ার্ড নয়, ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো সমন্বয়ক বা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সহায়ক কাউন্সিলর বা ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর নিয়োগ করা হয়নি। আপনি দায়িত্ব দিয়েছেন বলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেছেন- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- আমি কাউকেই দায়িত্ব দেইনি। 

ডিসি/এসআইকে/আরআর