এনজিও ‌‘স্বীকৃতি’র প্রতারণা, প্রতারক পারভীন গ্রেফতার

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নিজেকে কখনও ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও মানবাধিকারকর্মী আবার কখনও সাংবাদিক বলে দাবি করেন তিনি।  কখনও আবার এনজিও বা আর্থিকপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক, কখনও দেশি-বিদেশি নিয়োগকারী সংস্থার মহাব্যবস্থাপক, কখনও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী, কখনও পরিবেশবিদ- এসবই তিনি দাবি করেন নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের সবার কাছে।  আর এসব পরিচয়ে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।  এক কথায় তিনি একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক।  তার নাম পারভীন আক্তার (৫০)।  স্বীকতি নামের ভুয়া একটি এনজিও’র প্রধান নির্বাহী পরিচয়ে মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এসবের পাশাপাশি ‘স্বীকৃতি’ নামের ভুয়া এনজিও সংস্থার আড়ালেও সাধারণ মানুষের আমানত মেরে খেয়েছেন এই নারী।  গতকাল শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলী থানাধীন ডিটি রোড এলাকায় (বাংলাদেশ বেতারের গুদামের বিপরীতে) ওই সংস্থার অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রতারক পারভীন আক্তারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা।
র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন জানান, ‘স্বীকৃতি’ নামের ওই ভুয়া এনজিও সংস্থার কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক তাদের কাছে অভিযোগ করেন।  অভিযোগের তদন্তে নামে র‌্যাব-৭।  খবর নিয়ে জানা যায়, সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে দৈনিক/সাপ্তাহিক/মাসিক ভিত্তিতে সংস্থাটিতে সঞ্চয় রাখতে প্ররোচণা দিতেন পারভীন আক্তার।  কিন্তু সঞ্চয়ের সীমা শেষ হলেও তিনি গ্রাহকদের মূল টাকা বা লাভ দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে পারভীন আক্তারের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তার কর্মচারীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে তাদের চুরির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করতেন।  এছাড়া তিনি প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করতেন।  কিন্তু সেগুলো আর ফেরত দিতেন না।
এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা ভুয়া এনজিও সংস্থা ‘স্বীকৃতি’র অফিস এবং পারভীন আক্তারের বাসায় বিশেষ অভিযান চালায়।  তার বাসা ও অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ সঞ্চয় ও ঋণের পাসবই, পূরণ করা চেক, স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও জমা বই, চুক্তিনামা, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প, ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের জরিমানা আদায়ের রশিদ, সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তার সিল, ‘স্বীকৃতি’ নামক সংস্থার ডেবিট ও ক্রেডিট ভাউচার বই, ফিক্সড ডিপোজিট রশিদ বই, অনুদান আদায়ের রশিদ বই, ক্যাশ পজিশন বই, প্যাড, বিদেশগমনের লিফলেট, বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম-সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, নিয়োগপত্র, লেজার বই, অঙ্গীকারনামা বই, মাসিক চাঁদা আদায়ের রশিদ, মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির বই, হিসাব খোলার বই, সাপ্তাহিক টপশিট, মাসিক সঞ্চয় আবেদন বই, প্রকল্প প্রস্তাব, আইডি কার্ড, চারটি পাসপোর্ট, গ্রেফতারকৃত আসামির একটি ভুয়া এনআইডি কার্ডসহ আরও বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, ‘এই নারী একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক।  তিনি বিভিন্ন ভুয়া ও অবাস্তব প্রকল্প এবং সচেতনতা কার্যক্রম দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি অধিদফতর/মন্ত্রণালয়ে অনুদানের আবেদন করেন।  এছাড়া তিনি ভুতুড়ে কার্যক্রম দেখিয়ে কিছুদিন আগে একটি মন্ত্রণালয়ে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেন’।
র‌্যাবের এই সহকারী পরিচালক আরও বলেন, ‘আসামি পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ১০ টির বেশি প্রতারণার মামলা আছে।  ২০১৪ সালে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সমবায় অধিদফতর ‘স্বীকৃতি’ সংস্থাটির লাইসেন্স বাতিল করে।  পরে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে লাইসেন্সের আবেদন করলেও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য লাইসেন্স অনুমোদিত হয়নি।  এরপরও তিনি তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন’।
‘গ্রেফতার আসামি ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, বিভিন্ন পরিচয়ে তিনি প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড যেমন- গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায়, ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, হুমকি প্রদান করে চাঁদা আদায়, আইনি সহায়তা দেয়া, চাকরি দেয়া বা বিদেশে পাঠানোর নামে টাকা আদায় করতেন।  এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখছে র‌্যাব-৭’- বলেন মাহমুদুল হাসান মামুন।

ডিসি/এসআইকে/এসএজে