এবার কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধানে সিএমপির ১৪৫ বিট কর্মকর্তা, সুফল নিয়ে সংশয়

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরে কিশোর গ্যাং কালচারে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।  নগরের অলিতে-গলিতে কিশোর-কিশোরীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এসব কিশোর গ্যাং এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় নানান গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করছে।  ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটেছে।  এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর নাতি আদনানসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।  তবে পুলিশের এমন উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও তা লোক দেখানো কিংবা কিছু মিডিয়া কাভারেজ নিয়ে পরে তা ক্যারিয়ারের সফলতা দেখানোর বিষয় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।  তাদের মতে, কোন এলাকায় কার নেতৃত্বে কারা কিশোর গ্যাং চালাচ্ছে বা কারা এর সদস্য তা কিন্তু পুলিশসহ স্থানীয়রা জানেন।  এতো ঘটা করে কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য নেয়ার উদ্যোগ কিছুটা প্রশ্নবোধকই মনে হবে।
এদিকেব, এসব কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বন্ধে এবার বিশেষ টীম গঠন করেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগ দেওয়া সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।  রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে কিশোর গ্যাং ও তাদের গডফাদারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
আগামিকাল শনিবার (৩ অক্টোবর) বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর ১৬টি থানার ১৪৫ জন বিট কর্মকর্তাকে তাদের বিটের নির্ধারিত এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে কিশোর গ্যাং ও তাদের মদদদাতা (গডফাদার) সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন সিএমপি কমিশনার।  গতকাল বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) রাতে তার ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে সঠিক তথ্য দিয়ে কোমলমতি কিশোরদেরকে সঠিক ও আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন নগরবাসীর প্রতি।  এর পাশাপাশি কারও ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অযথা হয়রানি না করারও আহ্বান জানান তিনি।

কিশোর গ্যাংয়ের প্রতীকী ছবি ইন্টারনেট থেকে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গড়ে উঠার মাধ্যমে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনার জন্ম দিচ্ছিল। সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার পদে যোগদানকালে সালেহ মোহাম্মদ তানভীর তার সংবাদ সম্মেলনেও কিশোর গ্যাং সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।  ওই সময় তিনি মাদক ও সন্ত্রাসের মতো কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধেও তার জিরো টলারেন্স নীতির কথা জানান দেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ১৬ টি থানায় মোট ১৪৫ বিট কর্মকর্তাকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  কোনোভাবেই যেন মূল পৃষ্ঠপোষকেরা তালিকার বাইরে থেকে না যায় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পুলিশের এই উদ্যোগে খুশী হলেও আস্থা রাখতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।  নগরের উত্তর কাট্টলীর আমানত উল্লাহ শাহ পাড়ার বাসিন্দা বকুল, গোলাপ, রজনীগন্ধা (প্রতীকি নাম) দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, আমাদের এই এলাকায় ১২ বছর থেকে ১৭ বছরের ছেলেদের রাজনীতির নামে নানান অপকর্মে যুক্ত করছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন ছাত্রনেতা।  ওয়ার্ড-থানা কমিটির নেতৃত্বও দিচ্ছে তারা।  এসব কিশোররা নেতার নির্দেশে নানান অপরাধ ঘটায়।  এমনকি গরীব ঘরের একটু সুন্দর মেয়ে দেখলেই তারা উত্যক্ত করে।  কেউ প্রতিবাদ করলেই এলাকা ছাড়া হতে হয়।  কিন্তু সেই নেতাদেরই দেখা যায় পুলিশের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকতে।  তারা এসব কিশোরদের দিয়ে এলাকায় মাদক বিক্রি ও চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করে।  মাঝে মধ্যে কোনো মাদক ব্যবসায়ী তাদের কথায় রাজি না হলে তাকে পুলিশে দিয়ে নিজেকে মাদক বিরোধী আন্দোলনের নেতা পরিচয় দেয়।  সম্প্রতি একটি খুনের মামলা হলেও সেই মামলার বাদীনিকে এলাকা ছাড়া ও তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, আইনের লোকদের সহায়তায় এলাকায় চষে বেড়ানোয় মানুষের মধ্যে আরো বেশি ভয় ঢুকে গেছে।  সিএমপির এমন উদ্যোগ এসব ছদ্মবেশী নেতাকে আইনের আওতায় আনতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের পদ্ম, নীল, মোহন (প্রতীকি নাম) এবং ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কিংশুক, নিসর্গ (প্রতীকি নাম) দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, থানা পুলিশের যারা বিট কর্মকর্তারা রয়েছে তারা জানেন এখানে ছোট ছোট অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের কারা মিছিল-মিটিং এ নেয়।  নানান অপরাধে কারা এসব কিশোরদের ব্যবহার করে।  পুলিশ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ভালো, তবে তা যে লোক দেখানো সেটা অবিশ্বাস্য নয়।  সাধারণ মানুষ এসব তথ্য দিতে বিট পুলিশ কর্মকর্তার কাছে যাবে না।  সুতরাং সেই লাউ আর কদুর মধ্যেই ঝুলবে।  তবে আমরা চাই কিশোর গ্যাং এর পৃষ্ঠপোষক, নেতৃত্বদাতা এবং সদস্যরা আইনের আওতায় আসুক, নচেৎ এসব ছেড়ে ভালো পথে চলুক।  মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি না করে পড়ালেখায় মন দিক।  এসব বাস্তবায়ন করতে হলে এর পৃষ্ঠপোষকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/সিসি