ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশের হামলায় পণ্ড ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ, আহত ৩০

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নোয়াখালী অভিমুখী লংমার্চে হামলা করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ।  সেখানে পুলিশকেও দেখা গেছে তাদের সাথে অংশ নিতে।  লংমার্চটি ফেনীতে পৌঁছলে এই হামলার ঘটনা ঘটে।  হামলায় ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম ছাত্রজোটের ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  জোটের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ফেনী ছাড়াও দাগনভূঞা উপজেলা সদরে সভার প্রস্তুতিকালে স্থানীয়দের সমাবেশেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।  এসময়ও বাম ফ্রন্টের কমপক্ষে ১০ জন স্থানীয় নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।  তবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়ন ও জোটের অভিযোগে বলা হয়, শনিবার (১৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে লংমার্চ করে পুরাতন ট্রাংক রোড হয়ে নোয়াখালী অভিমুখে যাত্রাকালে শহরের নির্মাণ সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছালে হামলার ঘটনা ঘটে।  এসময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটায় লংমার্চে অংশগ্রহণকারীরা প্রাণ বাঁচাতে ছুট দেন।  হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেহেদী নোবেল, আসমা আক্তার, ইমা, রাপিদা, দিপা ফাহমিদা গুরুতর আহত হয়েছেন।
লংমার্চে অংশ নেওয়া বাম ফ্রন্টের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন জানান, ‘সকাল ১০ টার দিকে আমরা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু করি।  বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সমাবেশ শেষে আমরা যখন বেগমগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাসে উঠতে যাই, তখন একদল যুবক যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগের, তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে।  তাদের সঙ্গে পুলিশও যোগ দেয় হামলায়।  এসময় জোটের মোট ২০ জনের মতো আহত হন’।
হামলার সময় পুলিশ নীরব ছিল বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল।  তিনি ও তার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকসহ ইউনিয়নের ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন উল্লেখ করে মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, ‘লংমার্চের প্রায় ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে’।
তবে এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এন সালাউদ্দিন ফিরোজ।  বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘লংমার্চ কর্মসূচি আমরাও সমর্থন করি।  কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তারা লংমার্চের নামে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর ছবি সম্বলিত ফেস্টুনে বিভিন্ন অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য লেখায় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।  এতে ছাত্রলীগ অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছে।  এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল করে’।  হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, ‘তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ হামলাকারীদের তাড়া করেছে এবং লাঠিচার্জও করেছে।  লংমার্চকারীদের কর্মসূচি পালনে পুলিশ সবধরনের সহায়তা করেছে’।  তিনি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাথে পুলিশও হামলায় অংশ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন- ‘আমরা না থাকলেতো বড় ধরণের ঘটনা ঘটে যেতো’।
এদিকে দাগনভূঞায় হামলার প্রসঙ্গে উপজেলা বামফ্রন্টের সমন্বয়ক ডা. হারাধন চক্রবর্তী বলেন, ‘পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে।  ১০ জনের মতো আহত হয়েছেন।  আহত নেতা-কর্মীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে’।
এই হামলার ঘটনাতেও ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন দাগনভূঞা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নাসের চৌধুরী।
পুলিশের ভূমিকার প্রসঙ্গে দাগনভূঞা থানার ওসি আসলাম সিকদার বলেছেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ