বাঁশখালীতে ৩৪ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন-সুপথে না ফিরলে রেহাই নেই

মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জলদস্যু ও বনদস্যু বাহিনীর সদস্য যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি, এখনও সময় আছে দ্রুত আত্মসমর্পন করুন।  না হলে পরিণতি ভালো হবে না।  আমরা উপকূল এলাকায় কোনো জলদস্যু থাকতে দিব না।  কোথাও কোনো জলদস্যু লুকিয়ে থাকতে পারবেন না, তাদেরকে আমরা দেখছি, দ্রুত এসব অপকর্ম ছেড়ে যারা আসবেন না, তাদের কে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।  সুপথে না ফিরলে রেহাই নেই।  তাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে।  আর যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলা থেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হবে।  অন্য মামলাগুলোও আমরা দেখবো।  আর যারা আত্মসমর্পণ করেননি, তাদের স্থান এ দেশে আর হবে না।  বনদস্যু আর জলদস্যু যারা আত্মসমর্পন করেননি তাদের তালিকাও আমরা হাতে পেয়েছি।  কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।  আজ যারা আত্মসমর্পণ করছেন তাদের আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।  আপনাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার প্রস্তুত।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  বেলা ১১ টায় র‌্যাব-৭ এর উদ্যোগে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন।  অনুষ্ঠানে বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকার কুখ্যাত ডাকাত ইউনুছ মেম্বার বাহিনীর প্রধান ইউনুছ ও আব্দুল হাকিম বাইশ্যা ছাড়াও মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়া এলাকার অর্ধশত জলদস্যুর একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আত্মসমর্পণের পর সরকারিভাবে তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।  আবারও তারা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও নজরদারি থাকবে।  সরকারের সক্ষমতা অনুযায়ী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাওয়া এসব মানুষদের সহযোগিতা করা হবে’।
বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই দেশকে দস্যু, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এদেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আত্মসমর্পন করতে এসেছেন তাদের প্রত্যেককে সরকারিভাবে অনুদান দেওয়া হবে।  আর যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি তারা সময় থাকতে আইনের আওতায় চলে আসুন।  না হয় পরিণতি ভালো হবে না’।  তিনি বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু।  পুলিশ সব সময় জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।  এই দেশে চোর-ডাকাতের স্থান হবে না।  সুন্দরবনে বর্তমানে ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করছে।  সেই এলাকা আগামি ২ বছরের মধ্যে জলদস্যু মুক্ত হবে।
অনুষ্ঠানে র‌্যাব এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফাইল মোস্তাফা সরওয়ার বলেন, ‘এখনো বঙ্গোপসাগরে কিছু কিছু দস্যুর দল সক্রিয় রয়েছে।  এদের আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয় ভয়াবহ পরিস্থিতির কবলে পড়তে হতে পারে’।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের শুরুতে বাইশ্যা ডাকাত বাহিনীর প্রধান বাইশ্যা ডাকাত নিজের কাছে থাকা বন্দুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে জমা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার ঘোষণা দেন।  এ সময় বাইশ্যা ডাকাত বলেন, ‘আমি ভালো মানুষের ছেলে ছিলাম।  আমি খারাপ মানুষের সাথে ভিড়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছি।  মানুষ আমাদেরকে ঘৃণা করে।  আমার ছেলে-মেয়ে বাজার-হাটে গেলে সাধারণ মানুষ তাদেরকেও আমার কারণে ঘৃণা করতো।  আমি এতোদিন অন্যায় পথে ছিলাম।  আমরা ভুল বুঝতে পেরেছি।  মুক্ত জীবনে ভালোভাবে যাতে চলতে পারি, সে জন্য প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চাই’।  যারা আত্মসমর্পণ করেনি তাদের এই পথ থেকে ফিরে আসারও আহবান জানান তিনি, বলেন- যারা আমাকে আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।  আমি আর কোনোদিন এই খারাপ কাজে নিজেকে জড়াবো না।  আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাই, আমি ভালো হয়ে যাব।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কালাবদা বাহিনীর ৪ সদস্য তাদের কাছে রক্ষিত বন্দুক ও গুলি জমা দেন।  এদিন সবর্মোট ১১ বাহিনীর ৩৪ জন জলদস্যু আত্মসমপর্ণ করেন।  জলদস্যু দলের সদস্যরা এ সময় দেশি-বিদেশি ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২ হাজার ৫৬টি গুলি ও কার্তুজ জমা দেন।  আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায়।
একই অনুষ্ঠানে এর আগে আত্মসমর্পণ করা বাইশ্যা বাহিনী, খলিল বাহিনী, রমিজ বাহিনী, বাদশা বাহিনী, জিয়া বাহিনী, কালাবদা বাহিনী ও ফুতুক বাহিনীসহ অন্যান্য ১১ জন জলদস্যুর প্রত্যেককে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামশুল হক টুকু এমপি, র্যা ব এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফাইল মোস্তাফা সরওয়ার, বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, কুতুবদিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়ার সংসদ সদস্য মো. জাফর আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, চট্টগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার রাশেদুল হক, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএসএম শরিফ হোসেন, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালীব সাদলী, পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা আক্তার কাজেমী।  অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, প্রিন্ট ও ইলেকট্রক্স মিডিয়ার সাংবাদিকসহ জলদস্যুদের আত্মীয়-স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি