চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে, আদালতকে দুদক

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে হাই কোর্টকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তবে দুদকের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি দুদক গুরুত্বের সাথে দেখছে; এ বিষয়ে অনুসন্ধানও চলছে।
এ কে এম ফজলুল্লাহর পুনঃনিয়োগের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) শুনানিতে এমন তথ্য দেন দুদকের আইনজীবী।  এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ শুনানি একমাসের জন্য মূলতবি করে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইকরাম উদ্দিন খান চৌধুরী।  দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা।
আইনজীবী ইকরাম উদ্দিন খান চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আদালতকে দুদক লিখিতভাবে কিছু জানায়নি।  তবে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন, দুদক বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।  পরে আদালত একমাস সময় দিয়ে সে পর্যন্ত রিট শুনানি মূলতবি রেখেছেন’।
দুদকের আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা বলেন, ‘আদালত রিটের শুনানি এক মাসের জন্য মূলতবি করেছেন।  আর অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অবস্থান জানতে চাইলে আমি আদালতকে বলেছি, দুদক বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছে। তদন্ত চলছে, কোনো কিছু পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।  মূলত শুনানি মূলতবি রেখে আদালত দেখতে চাচ্ছে আগামি একমাসে দুদক কি পদক্ষেপ নেয়’।
১৯৪২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া ফজলুল্লাহ লাহোর থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন এবং ১৯৬৮ সালে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান।  পরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে অবসর নেন।  এরপর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই তাকে এক বছরের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।  পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন হলে তিনি প্রথম দফায় তিন মাসের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেলেও পরে পাঁচ দফায় পুনঃনিয়োগ পেয়ে গত ৯ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
গত ৩১ অক্টোবর ৮০ বছর বয়সী ফজলুল্লাহ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়।  তবে তার আগেই গত ৭ সেপ্টেম্বর বোর্ড সভায় আরও তিন বছরের জন্য তার নিয়োগের সুপারিশ করা হলে গত ১ অক্টোবর তাকে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়।  ১ নভেম্বর থেকে এ পুনঃনিয়োগ কার্যকর হয়।
প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসায় কয়েক হাজার কোটি টাকার চলমান প্রকল্পে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘ মেয়াদে পাকাপোক্ত করতে অনুগত বোর্ড দিয়ে এই নিয়োগের সুপারিশ করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম সদরের বাসিন্দা ওয়াসার গ্রাহক মো. হাসান আলী গত ১১ নভেম্বর এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে চট্টগ্রামে দুদকের বিভাগীয় পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেন।  কিন্তু সেসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুদকের নিষ্ক্রিয়তা এবং এ কে এম ফজলুল্লাহর পুনঃনিয়োগের সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে গত ২০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে সে রিটটি শুনানির জন্য উঠলে দুদক আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা আপত্তি জানিয়ে বলেন, রিট আবেদনকারী গত ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দিয়েছেন।  চট্টগ্রাম দুদক এ অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা তার জানা নেই।  তাছাড়া অভিযোগ দেওয়ার ৮ দিনের মাথায় তিনি রিট আবেদন করেছেন।  অভিযোগ যাচাই-বাছাই বা অনুসন্ধান শুরু করার প্রস্তুতির জন্য এ সময় খুব বেশি না।
পরে আদালত রিট আবেদনটির শুনানি একমাস মূলতবি রেখে এই সময়ের মধ্যে দুদককে পদক্ষেপ জানাতে বলেছিল।  কিন্তু বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রিটটি ফের শুনানির জন্য উঠলেও দুদক সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি। 

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ