ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে চাকরি হারালেন ১০ মাদকসেবী পুলিশ

ঢাকা ব্যুরো, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
মাদকসেবনকারী ৬৮ সদস্য ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন।  তারা সবা ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত বলে জানা গেছে।  এ জন্য ৪৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।  ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ১৮ জন।  এর মধ্যে ১০ জনকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছে।  বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, মাদক বিক্রয়, সেবন এবং মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ উদ্ধার মাদক তুলনায় কম দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন ডিএমপির আরও ২৯ সদস্য।  এদের মধ্যে ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ৬ পুলিশ সদস্য।
রবিবার (২২ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য-সহিষ্ণুনীতি বাস্তবায়নে পুলিশ নিরলস কাজ করছে।  এর ধারাবাহিকতায় মাদক সেবন ও এর কারবারে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।  রবিবার পর্যন্ত ডোপ টেস্টে পজিটিভের সংখ্যা ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে।  চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় তাদের সবার বিরুদ্ধেই একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে এর আগে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাদক সংশ্লিষ্টতায় শাস্তি দেয়ার আগে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।  যারা নিজেদের শোধরায়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।  মহানগর পুলিশের মাদকাসক্ত কোনো সদস্য আমার কাছে এলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।  ডিএমপির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে ডোপ টেস্ট করানো হচ্ছে’।
সূত্র জানায়, ডিএমপি সদস্যদের মধ্যে মাদকাসক্ত হিসেবে সন্দেহভাজনদের তালিকা করে সিআইডির ল্যাবে তাদের রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।  ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, ‘ডোপ টেস্টে এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সংখ্যা ৬৮ জন।  তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে ৪৩টি।  বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন ২৫ জনের বিরুদ্ধে।  সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি হয়েছে ১৮ জনের বিরুদ্ধে এবং বরখাস্তের চূড়ান্ত আদেশ জারি হয়েছে ১০ জনের বিরুদ্ধে’।
তিনি আরও বলেন, ‘মাদক সংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগ যেমন মাদক বিক্রি অভিযুক্ত ১০ জন, মাদক সেবনে অভিযুক্ত পাঁচজন, মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ১০ জন এবং উদ্ধার মাদক উদ্ধারের তুলনায় কম দেখিয়ে অর্থগ্রহণে অভিযুক্ত চারজন।  মোট ২৯ জন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের মধ্যে মাদক সেবনে একজন এবং মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় পাঁচজনসহ মোট ছয়জন চাকরিচ্যুত হয়েছেন’।
জানা গেছে,
মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর।  এর অংশ হিসেবে দুই মাস আগে ডিএমপি সদস্যদের ডোপ টেস্ট শুরু হয়।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনে নবসৃষ্ট ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ডোপ টেস্টে যাদের পজিটিভ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা যাবে যে, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।  এ উদ্যোগের ফলে অনেকে ভালো হয়েছে এবং এ রাস্তা থেকে ফিরে এসেছে’।  তিনি আর বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা মাদক ব্যবসায়ীকে সহযোগিতা করছে, সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।  এ বিষয়ে কোনোরকম শিথিলতা দেখানো হচ্ছে না।‌  সাধারণ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়, ঠিক সেভাবেই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশন-এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত করছে।  ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরতদের অনেকে মাদকাসক্ত হওয়ার পাশাপাশি মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে আর্থিক সুবিধা নেয় বলেও তদন্ত উঠে এসেছে।  তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ