বিএমএ নেতা ফয়সালের অনিয়ম তদন্তে ৫ জনকে দুদকে তলব

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক আলোচিত-সমালোচিত ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ ৫ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ১৯ নভেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাদের তলব করা হয়।  অনিয়ম তদন্তে পাঁচজনকে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে
তলব করা চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ডা. তানজিলা তাবিব চৌধুরী, টেন্ডার শাখার প্রধান মঈনুদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী অফিস সহকারী কানিছ ফাতেমা, হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা শাহজাহান ও ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত তাকবির হোসেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য তাকবিরকে আগামিকাল ২৫ নভেম্বর এবং বাকিদের আগামি পরশু ২৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর আগে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কার্যালয় ছাড়াও দুই হাসপাতালকে তথ্য চেয়ে নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।  চট্টগ্রামের প্রধান দুই হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও দুদক নোটিশ পাঠিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়েও।  প্রথম পর্যায়ে এই তিনটি নোটিশ গেলেও পর্যায়ক্রমে নোটিশ যাবে ম্যাক্স হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতারগুলোতেও।

গত আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতে ‘চাঁদাবাজি, সরকারি-বেসরকারি ঠিকাদারি, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন-ক্লিনিক বাণিজ্য’ নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।  এর কেন্দ্রে রয়েছেন বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী।  বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি।  দুদক ডা. ফয়সাল ইকবালের জ্ঞাতবহির্ভূত সম্পদের খোঁজও নেওয়া শুরু করেছে।
অনুসন্ধানের প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ২০০৮ সাল থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সবগুলো প্রকল্প ও ক্রয় করা সরঞ্জামের নথি তলব করেছে দুদক। এছাড়া গত ১১ বছরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুই হাসপাতালে নিয়োগকৃত জনবলের তালিকা চাওয়া হয়েছে।  অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ও স্টোরের সব নথিও তলব করেছে দুদক।
দুদকের পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ডা. ফয়সল ইকবালের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে।  যাচাই-বাছাই শেষে গত জুনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে।  এরপর গত ২৬ আগস্ট এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই চিকিৎসক নেতার বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ ও বদলি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, চমেক হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার খাবার সরবরাহ ও আউটসোর্সিং ব্যবসাসহ বিভিন্ন সরবরাহ কাজের নিয়ন্ত্রণ, মামার প্রতিষ্ঠান জমজম এন্টারপ্রাইজসহ অন্তত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেনামে টেন্ডারের কাজ হাতিয়ে নেওয়াসহ নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।  চমেক হাসপাতালে শুধু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেই প্রায় ৪২ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও রয়েছে ফয়সল ইকবালের বিরুদ্ধে।
চলতি বছর করোনা ভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামজুড়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে নৈরাজ্য তৈরির জন্য বরাবরই দায়ী করা হচ্ছিল বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে।  সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাবঞ্চিত করা চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে তুমুল আলোচনা-সমালোচনায় বারেবারেই বিএমএ চট্টগ্রামের এই সাধারণ সম্পাদককে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছিলো বিভিন্ন মহল থেকে।  গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এমনকি চট্টগ্রামের রাজপথে করোনাকালেই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।  সেখান থেকে উঠেছে তাকে গ্রেপ্তারের ডাকও।
গত জুলাইয়ে সেই একই অভিযোগ উঠে আসে পুলিশের এক গোপন প্রতিবেদনেও।  পুরো প্রতিবেদনটিই ছিল বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে নিয়ে।  গত ১ জুলাই বিশেষ ওই প্রতিবেদনটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।  বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে গত ১২ আগস্ট সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠানো হয়।  সেখানে ওই রিপোর্ট পর্যালোচনা করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পাঠানোর কথা থাকলেও তার ভাগ্যে পরে কী ঘটেছে তা আর জানা যায়নি।

ডিসি/এসআইকে/এনএজে