আমার সন্তানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন বদি : প্রথম স্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সাবেক স্বামী আবদুর রহমান বদি গর্ভধারণের পর কীভাবে তাকে অস্বীকার করে অন্য লোকের সঙ্গে বিয়ে দেন সে কথা জানিয়েছেন সুফিয়া খাতুন।  তিনি জানান, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি আমার সন্তানকে গর্ভাবস্থায় মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।  পরে জোর করে একজন মিস্ত্রির সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিয়ে ভারমুক্ত হন এবং আমার সন্তান বেঁচে যায়।  সেই ভয়াবহ দিনের কথা আমি ভুলবো না।
দীর্ঘ ২৭ বছর পর সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে এক যুবক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় এর সপক্ষে প্রমাণ দিতে গিয়ে যুবকের গর্ভধারিণী মা সুফিয়া খাতুন এ কথাগুলো বলেছেন।
সুফিয়া খাতুন অভিযোগ করেন, ‘আমি অশিক্ষিত নারী। ২৭ বছর আগে আবদুর রহমান বদি কলেমা পড়ে মৌলভীর মাধ্যমে আমাকে বিয়ে করেন।  তবে বিষয়টা গোপন রাখার চেষ্টা করে।  বিয়ের পর সন্তান পেটে আসে।  পেটে আসা সন্তান ৬ মাসের মধ্যে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন উনি।  পরে আমার সন্তানের দিকে চেয়ে বদি ও তার মরহুম পিতা এজাহার কোম্পানির নানা শর্ত মেনে নিই।  সে তালাক দিয়ে প্রথমে নুরুল ইসলাম নামের একজন মিস্ত্রির সঙ্গে আমাকে জোর করে বিয়ে দেয়।  পরে টেকনাফ ছাড়তে বাধ্য করে।  বিষয়টি আমার স্বামী নুরুল ইসলাম মেনে নিয়ে বদির সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো বড় করে।  আমার ছেলে এখন সুশিক্ষায় শিক্ষিত।  তাই দীর্ঘ ২৭ বছর পর এসে আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দরকার হওয়ায় সমাজের কাছে মুখ খুলেছি’।
সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই।  আমার ছেলে মোহাম্মদ ইসহাক (২৭) এখন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র।  আমার ছেলের পিতৃ পরিচয় খুবই দরকার।  আমি আবদুর রহমান বদির কোনো সহায় সম্পদ চাই না, আমি চাই আমার সন্তানের পিতৃপরিচয়’।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ সহকারী জজ আদালতে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে নিজের পিতা দাবি করে মোহাম্মদ ইসহাক নামের এক যুবক আবেদন করলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।  এ ঘটনায় দেশব্যাপী নতুন করে আলোচনায় আসেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
আদালতে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল আবদুর রহমান বদি কলেমা পড়ে তার মা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন।  তার মায়ের বিয়ে পড়ান আবদুর রহমান বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে তৎসময়ে কর্মরত মৌলভী আবদুস সালাম।  বিয়ের সাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ মিয়া।  এসব ঘটনা বুদ্ধি হওয়ার পর তার গর্ভধারিণী মায়ের কাছেই শোনেন বাদী।  জানতে পারেন তার পিতা আবদুর রহমান বদি।  পরবর্তী সময়ে মায়ের হাত ধরে অসংখ্যবার পিতার কাছে যান।  পিতা আবদুর রহমান বদি অপ্রকাশ্যে তাকে বুকে জড়িয়ে আদর করেন।  মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  এভাবে অসংখ্যবার পিতা আবদুর রহমান বদির কাছে গিয়ে সান্নিধ্য পেয়েছেন।  কিন্তু, প্রকাশ্যে সন্তান হিসেবে মোহাম্মদ ইসহাককে মেনে নেননি তিনি।  কারণ, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, সামাজিক অবস্থানসহ নানা সমীকরণ দেখিয়ে মায়ের কাছে স্বীকৃতি দিতে বারবার সময় নেন তার পিতা।  তার মাও সাবেক স্বামীর (আবদুর রহমান বদি) কথার অবাধ্য হননি।  তাই তার মা সুফিয়া খাতুন এতদিন চুপ ছিলেন’।
মোহাম্মদ ইসহাক আরও জানান, তার বয়স বাড়ার কারণে পিতৃত্বের পরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।  বিষয়টি নিয়ে মা-ছেলে দুইজন মিলে আবদুর রহমান বদির ছোটবোন শামসুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।  তারা ঘরোয়াভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন।  আবদুর রহমান বদি এরপরও কৌশলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।  এখন তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।  তাই কোনো উপায় না দেখে পিতৃত্বের দাবিতে আদালতের দ্বারস্ত হয়েছেন মোহাম্মদ ইসহাক।
জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী অ্যাড. মোহাম্মদ ওসমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাদী মোহাম্মদ ইসহাকের মা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেছেন সেটি মায়ের স্বীকারোক্তি।  ওই সময়ে বিয়ে পড়ানো মৌলভী আবদুস সালাম ও সাক্ষী এখলাছ এখন বেঁচে নেই।  মা সুফিয়া খাতুনের ওপর নির্ভর করে বাদী পিতৃত্ব দাবি করে আদালতে আবেদন করেছেন।  এরপর আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেছেন।  আগামি ১৪ জানুয়ারি আদালত শুনানির দিন ধার্য করেছেন’।
পিতৃ পরিচয়ের আবেদনকারী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই পিতৃত্ব থেকে বঞ্চিত।  চোখের সামনে পিতার পরিচয় জেনেও চোখের পানি ফেলেছি।  সব সহ্য করেছি নীরবে।  কিন্তু, প্রকাশ্যে বাবা ডাকার সুযোগ হয়নি।  কিন্তু, কোনো উপায়ন্তর না দেখে প্রকাশ্যে এলাম। আদালতে মা সুফিয়া খাতুনকে বিবাদী করে নিজের পিতৃত্বের পর্যাদা দেওয়ার জন্য সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির কাছে আবেদন করেছি।  পিতৃ পরিচয় নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করারও আবেদন করেছি’।
বিষয়টি জানার জন্য উখিয়া-টেকনাফ সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ