প্রেমিকের জন্য স্বামীকে ঘনিষ্ঠ হতে বাঁধা, পরিণামে হলেন লাশ

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানীর ডেমরায় বিয়ের ২০ দিন পরও কাছে ঘেঁষতে না দেয়ায় স্ত্রী মীমকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন শামীম নামে এক যুবক।  ঘটনার পর পালিয়ে থাকা স্বামীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।  পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারপূর্বক আদালতেও নিজের দায় স্বীকার করেছেন স্বামী শামীম।
জবানবন্দিতে শামীম জানান, বিয়ের পর ২০ দিন কেটে গেলেও মীম তাকে ঘনিষ্ঠ হতে দেননি।  যতবারই কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ততবারই বিভিন্ন বাহানায় দূরে সরে যান মীম।  গত ৯ নভেম্বর দুপুরে স্বামীকে গোসলে পাঠিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান মীম।  পরবর্তীতে জানা গেছে, পুরোনো প্রেমিক শান্তর সঙ্গে পালিয়েছেন মীম।  কয়েকদিন পর মীমকে ডেকে এনে হত্যা করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেমরার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মীমের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম হয় একই এলাকার কসমেটিক্‌স দোকানের কর্মচারী শান্তর।  বিষয়টি মীমের পরিবার ও স্বজনদের নজরে এলে নানাভাবে বাধা দেয়া হয়।  তবু ফেরানো সম্ভব হয়নি তাকে।  প্রেম থেকে বিরত রাখতে গত ২৪ অক্টোবর মীমকে বিয়ে দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চাঁনপাড়ার বাসিন্দা মোটর মেকানিক শামীমের সঙ্গে।  বিয়ের পর থেকেই তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছিল মীম।
মীমের প্রেমিক শান্ত পুলিশকে জানান, স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে গিয়ে তার মোবাইলে কল করেন মীম।  শান্তকে ডেকে নিয়ে তিনি বলেন- ‘তুমি যদি আমাকে না নিয়ে যাও, আমি এই মূহুর্তে আত্মহত্যা করবো’।  এরপর বাধ্য হয়ে মীমকে ডেমরায় এক বন্ধুর বোনের বাসায় রাখেন শান্ত।  ওই বাসা থেকেই মীম তার বাবাকে মোবাইলে জানায়, সে শান্তর সঙ্গে রয়েছে।  কোনোভাবেই শান্ত ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে সংসার করবেন না।  ওই সময় শামীমের সঙ্গে ডিভোর্স করিয়ে শান্তর সঙ্গেই বিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে মেয়েকে ফিরে যেতে বলেন বাবা হবি কাজী।  পরে ডেমরার বাঁশেরপুলের তাজমহল রোডে বাবার বাসায় ফিরে যায় মীম।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে শামীম ও মীমের পরিবারের মধ্যে আলোচনা হয়।  তারা দু’জনকে এক সপ্তাহ সংসার করতে বলেন।  এতেও সম্পর্কের উন্নতি না হলে বিচ্ছেদ করানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় দুই পরিবার।  পরদিন দুপুরে মীমের বাসায় যান শামীম।  স্ত্রীর হাত-পা ধরে শান্তকে ভুলে যেতে অনুরোধ করেন স্বামী শামীম।  দীর্ঘ সময় মীমকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
শামীমের ধারণা ছিল- কোনোভাবে দুজন ঘনিষ্ঠ হতে পারলেই শান্তকে ভুলে তার প্রতি আকৃষ্ট হবেন মীম।  এ কারণে তিনি জোর করতে থাকেন।  এক পর্যায়ে মীম প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন।  ওই সময় শামীম বলতে থাকেন, ‘আমি না পেলে তোকে আর কেউ পাবে না, কেউ না’।  এরপরই মীমের ওড়না তারই গলায় পেঁচিয়ে ধরেন শামীম।  কিছুক্ষণ পর মীমের নাক, কান দিয়ে রক্ত বের হয়।  চোখ দুটি বড় বড় হয়ে যায়।  নিথর হয়ে যায় দেহ।  মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত শ্বশুরের বাসা থেকে বের হয়ে যান শামীম।
জামাই চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ঘরে ঢুকে মেয়ের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান মীমের মা।  খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।  এ ঘটনায় ডেমরা থানায় হত্যা মামলা করেছেন মীমের বাবা হবি কাজী।
ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, মামলার পর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শামীমের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।  রাজধানীর মুগদা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় দায় স্বীকার করেছেন শামীম।  আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ