দেশে মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে: এইচআরএসএস

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মানবাধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) ২০২০ সালের বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক।  বিগত বছরগুলোর মতো ২০২০ সালের বার্ষিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, প্রশাসনের হেফাজতে নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, গুমের অভিযোগ, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা অব্যাহত রয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও গ্রেফতার, সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে নিরীহ বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতন এবং এই করোনা মহামারির মধ্যেও নারীর প্রতি সহিংসতা বিশেষ করে ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে হামলা, মত প্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ বিশেষকরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করার মধ্য দিয়ে দেশে বিরাজমান মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উদ্বেগের চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছেছে।  ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস এর তথ্য অনুসন্ধান ইউনিট ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
দৈনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এ বছরে (ক্রসফাযার-বন্দুকযুদ্ধ-সরাসরি গুলি-নির্যাতনে মৃত্যু) বিচার ‘বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ২৪৩ জন নিহত হয়।  এদের ভিতরে ক্রসফায়ারে ১৬৮ জন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০ জন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১২ জন এবং কারা হেফাজতে মারা যান ৪৩ জন।  একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৩৫ জনকে উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।  পরবর্তী সময়ে এদের মধ্যে লাশ পাওয়া গেছে দুই জনের।  গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ১৩ জনকে এবং ১৪ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ১২৫টি হামলায় এই বছর ‘সাংবাদিক’ নিহত হয়েছেন দুই জন।  আহত হয়েছে অন্ততপক্ষে ৮৩ জন।  গ্রেফতার হয়েছে ১৭ জন। এছাড়াও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে ২০ জন এবং হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ২০ জন সাংবাদিক।  একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২০১৮ এর অধিনে দায়ের করা ১৪১টি মামলায় ১১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর গুলিতে ৩৪টি ঘটনায় শারীরিক নির্যাতন ও গুলি করে ৫১ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।  আহত হয়েছে ১৫ জন এবং গ্রেফতার হয়েছে ৩২ জন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ