বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক সদস্যরা ডাকাতিতে জড়াচ্ছে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানীর আমিনবাজারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ডাকাতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই। তাদের মধ্যে ফারুক হোসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক করপোর‌্যাল। রবিবার (৩১ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম।
গত ১৪ জানুয়ারি এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করে স্বর্ণ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সুরেশ চন্দ্র হালদার (৪৮), মিঠুন মজুমদার (৩৩), উজ্জল চন্দ্র দাস (৩২), মিহির দাসকে (৩২) গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ জানুয়ারি রাতে সোহেল আহমেদ পল্লব (৪৫), ফারুক হোসেন (৪০), শংকর চন্দ্র ঘোষ (৪৫), মিঠুন চৌকিদারকে (৩০) সাভার ও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়।  এসময় উদ্ধার করা হয় স্বর্ণ বিক্রির ৫ লাখ টাকা, ২২ ভরি স্বর্ণ, ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল।
পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, ভুক্তভোগী তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই ঢাকা জেলাকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
পিবিআই জানতে পারে, গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার অর্ডার পাওয়া স্বর্ণ পৌঁছে দিতে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হন।  সঙ্গে ছিলেন স্বর্ণের কারিগর ও ডাকাতির পরিকল্পনাকারীদের একজন সুরেশ হালদার। সুরেশের মাধ্যমেই অর্ডারটি পান অর্জুন। তবে অর্ডারটি ছিল ভুয়া।
৭ সেপ্টেম্বর সকালে তাঁতীবাজার থেকে রাজবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাবতলীতে আসেন অর্জুন ও সুরেশ। গাবতলী থেকে রাজবাড়ী পরিবহনের একটি বাসে উঠলে আমিনবাজার এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেল বাসটির গতিরোধ করে। এসময় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসটির ভেতরে তল্লাশি চালায় ডাকাতরা।  অর্জুন হালদার ও সুরেশ হালদারের কাছে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে বলে বাস থেকে দু’জনকে নামায়।  পরে তাদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি নিয়ে আসে। এর পরই অর্জুনের কাছ থেকে ১৬৬ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয় তারা।
এ ঘটনার পর আদালতে সিআর মামলা করেন অর্জুন হালদার।  যার তদন্তভার পায় পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতারকৃত আটজনের মধ্যে ফারুক হোসেন নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য।  ২০১৬ সালে করপোর‌্যাল পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।  গ্রেফতার হওয়া আরেকজন সোহেল আহমেদ পল্লব।  ২০১৮ সাল থেকে ডাকাতির কাজে যুক্ত তিনি।
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহিস্কৃত অনেক সদস্যও এ ধরনের ডাকাতির নীল-নকশা সাজান উল্লেখ করে খোরশেদ আলম বলেন, চক্রটি ধরতে অনেককেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  আরো এক সাবেক সেনা সদস্যের এ ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই।  তিনিও নজরদারিতে আছেন। এ ছাড়া এক পুলিশ সদস্যও এদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানানো হয়।
ডাকাতির কাজে কোনও বিশেষ অস্ত্র কিংবা ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হয় কিনা তা গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, গ্রেফতারকৃত চক্রটি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।  এ চক্রে আরও অন্তত ১৫ জন আছে। চক্রটি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ডাকাতি করে আসছিল।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ফারুক হোসেনের সঙ্গে ডাকাতির কাজে তথ্য সংগ্রহ করতো মিঠুন চক্রবর্তী ও সুরেশ হালদার। অপারেশনাল কাজ করতো সোহেল আহমেদ পল্লব। সহযোগী ছিল মিঠুন, উজ্জ্বল, মিহির। ডাকাতি করা স্বর্ণ কিনতো গ্রেফতারকৃত তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র ঘোষ।

ডিসি/এসআইকে/এমএস