ঘটনা সম্পর্কে যা বললেন সেই ছাত্রীর বান্ধবী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার ফারজানা জামান নেহা সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে আদালতকে বলেছেন, ওই দিন রেস্টুরেন্টে তিনি মদপান করার পর মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়।  তখন সেখান থেকে তিনি বাসায় চলে যান।  পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওই ছাত্রীর বান্ধবী নেহাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তিনি এ কথা বলেন।
আদালতে নেহা বলেন, ‘গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই।  সেখানে গিয়ে আরও কয়েকজনকে দেখতে পাই।  আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি।  সেখানে আমি মদপান করি।  তিন প্যাক খাওয়ার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়।  আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই।  বাসায় আসার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়।  আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিই’।
এদিন মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য নেহাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।  শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর আজিমপুর এলাকার একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেফতার করা হয়।  প্রাণ হারানো ছাত্রীর বাবার করা মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি।
তারও আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসির আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন আরাফাতের বন্ধু শাফায়াত জামিল (২২)।
আদালতে হলফনামা দিয়ে মামলায় সম্পৃক্ততার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শাফায়াত। এরপর বিচারক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
হলফনামায় শাফায়াত দাবি করেন, ‘গত ২৮ জানুয়ারি বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন তিনি।  রেস্টুরেন্টে আরাফাত ও তার আরেক বন্ধু মুর্তজা রায়হান চৌধুরী তার বান্ধবীকে নিয়ে আসেন’।
মুর্তজা ও তার বান্ধবী পূর্বপরিচিত ছিলেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা হালকা নাস্তার পর মদপান করে চলে যান।  আমি অসুস্থ বোধ করলে রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় চলে যাই।  ৩০ জানুয়ারি আরাফাত মারা যান’।
গণমাধ্যমে মুর্তজা রায়হানের বান্ধবীর মৃত্যুর কথা জেনেছেন দাবি করে শাফায়াত বলেন, ‘এরপর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমার বাসায় অভিযান চালায়।  আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আরাফাতসহ চারজন ও অজ্ঞাতনামা একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।  যেহেতু পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমার বাসায় অভিযান চালায়, সেহেতু অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আমি নিজেকে সন্দেহ করছি।  আমি এ মামলায় সম্পৃক্ত হতে ইচ্ছুক’।
ওই ছাত্রীর বাবার মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি বিকেল ৪ টায় মুর্তজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আরাফাতের বাসায় যান।  সেখানে স্কুটার রেখে আরাফাত, ওই তরুণী এবং রায়হান একসঙ্গে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যান।  সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা এবং একজন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন।  সেখানে আসামিরা ওই তরুণীকে জোর করে ‘অধিক মাত্রায়’ মদপান করান।
মদপানের একপর্যায়ে ওই তরুণী অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে তার এক বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে বন্ধু নুহাত আলম তাফসীরের বাসায় নিয়ে যান।  সেখানে তরুণীকে ধর্ষণ করেন রায়হান।  এ সময় রায়হানের বন্ধুরাও কক্ষে ছিলেন।
ধর্ষণের পর রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খানকে ফোন দেন।  সেই বন্ধু পরদিন এসে তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।  দুদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার মৃত্যু হয়।
ওইদিনই চারজনকে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন নিহত তরুণীর বাবা।  মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও একজনকে আসামি করা হয়।
৩১ জানুয়ারি মুর্তজা রায়হান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসীরের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ